• সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার ‘ভেক’ ধরে গাঁজা পাচার, উদ্ধার ১৪৫ কেজি গাঁজা, তিন দম্পতি সহ গ্রেপ্তার ১০
    বর্তমান | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ট্রিম করা দাড়ির স্মার্ট রাজীব দাস জাতীয় সড়কের পাশে স্ত্রী কুসুম কর্মকারকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশেই দাঁড়িয়ে আর এক দম্পতি যাদব সর্দার ও তাঁর স্ত্রী পূজা দাস। এভাবেই জাতীয় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে পাঁচজোড়া যুবক-যুবতী। সঙ্গে নামী সংস্থার দামি ট্রলিব্যাগ ও ব্যাকপ্যাক। রবিবার সন্ধ্যা নামার আগে কুলটি থানার বামনা মোড়ের কাছে যুবক-যুবতীদের এই টিমকে দেখে পুলিসের সন্দেহ হয়। পুলিসি জেরায় প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, তারা ওড়িশা ঘুরতে গিয়েছিল। এখন বাড়ি ফিরছে। তাদের বাড়ি নদীয়া ও মুর্শিদাবাদে। সন্দেহ হয় পুলিসের। হাজির হয় গোয়েন্দা বিভাগের পুলিসও। তাদের ঘিরে তল্লাশি শুরু হতেই সকলের চক্ষু চড়কগাছ! মেয়েদের পিঠে থাকা ব্যাকপ্যাক থেকে বের হয় গাঁজাভর্তি স্ল্যাব(প্যাকেট)। ৯টি ট্রলি ও ৫টি ব্যাকপ্যাক থেকে মোট ১৮টি গাঁজার স্ল্যাব উদ্ধার হয়। যার ওজন ১৪৪ কেজি ৫৯০গ্রাম। পুলিস অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে। সোমবার তাদের আসানসোল আদালতে তোলা হয়। বিচারক অভিযুক্ত পাঁচ যুবকের সাতদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।


    সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ বলেন, তিনজোড়া স্বামী-স্ত্রী সহ মোট ১০জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এরা ঘুরতে যাওয়ার ভেক ধরে আন্তঃরাজ্য গাঁজা পাচার করে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। এদিন বিচারক পাঁচ অভিযুক্তের সাতদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের কাছ থেকে দু’টি রুটের ট্রেনের টিকিট উদ্ধার হয়েছে। একটি রুট হচ্ছে হাওড়া থেকে ওড়িশার বড়গার রোড। দ্বিতীয়টি হল বড়গা রোড থেকে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ। পুলিসের দাবি, ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তরা হাওড়া থেকে ওড়িশা যায়। সেখানে গাঁজা সংগ্রহ করে তারা ২ মার্চ ট্রেন ধরে ধানবাদে আসে। সেখান থেকে বাসে কুলটি থানা এলাকায় পৌঁছয়। পুলিস আদালতে জানায়, অভিযুক্তরা কুলটি থেকে গ্রামের রাস্তা ধরে ঝাড়খণ্ডের নলা হয়ে মুর্শিদাবাদ ঢোকার পরিকল্পনা করেছিল। দুই অভিযুক্ত মিস্টার শেখ(২৮) ও চিনারুল ইসলাম(২৬) মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। বাকি ছ’঩জনই নদীয়ার। রাজীব, কুসুম, যাদব এবং পূজা ছাড়াও রয়েছে বিমল মণ্ডল ও তার স্ত্রী সাগরি মণ্ডল। আরও দুই যুবতী হল কেকা দেহেরী ও পুতুল যাদব।


    ওড়িশা থেকে বাংলায় গাঁজা পাচারের চক্রীরা যেন ‘পুষ্পা’ সিনেমার বড় ভক্ত। কখনও গাড়ির ভিতরে অ্যান্টিচেম্বার করে, কিংবা টম্যাটোর ট্রে-র আড়ালে শিল্পাঞ্চল হয়ে বাংলায় গাঁজা পাচারের চেষ্টা হয়েছে। বহুক্ষেত্রেই পুলিসের তদন্তে তাদের ফন্দি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঘুরতে যাওয়ার নাম করে মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে সপরিবারে গাঁজা পাচারের ঘটনা এই প্রথম প্রকাশ্যে এল। ঘটনায় পুলিসের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। পুলিস গাড়ির নাকা তল্লাশি করে গাঁজার খোঁজ চালাতে পারে। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ সপরিবারে ট্রলি ও ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঘুরতে যায়। সেই বেশভূষাকে হাতিয়ার করে যদি গাঁজা পাচার করা হয়, তা যাচাই করতে পুলিসের কালঘাম ছুটবে। পাশাপাশি, বিজেপি শাসিত ওড়িশায় কীভাবে অবাধে গাঁজা চাষ ও পাচার হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
  • Link to this news (বর্তমান)