• পলাশিপাড়ায় নার্সিংহোমের আড়ালে চলত মাদক ব্যবসা, আড়াই কোটি টাকার হেরোইন সহ ধৃত ‘বাবু’
    বর্তমান | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নার্সিংহোমের ব্যবসার আড়ালেই চলত হেরোইনের কারবার। মাদক ব্যবসায় মোটা টাকার আর্থিক লেনদেন করত পলাশিপাড়ার আব্দুল সালাম মণ্ডল ওরফে বাবু। পুলিসের নজরেও সে দীর্ঘদিন ধরে ছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় ধরা পড়ত না। অথচ কালীগঞ্জ, পলাশিপাড়া এলাকায় হেরোইনের ব্যবসার অন্যতম মাথা।‌ পাশাপাশি বাবুর সঙ্গে আবার শাসকদল তৃণমূলের যোগ রয়েছে। অবশেষে এসটিএফ রবিবার রাতে ধুবুলিয়া থানার হাঁসাডাঙা এলাকা থেকে হাতেনাতে পাকড়াও করে তাকে। সেইসঙ্গে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়। ধরা পড়ে মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত বনগাঁর আরও দু’জন ব্যক্তি।‌ তাঁদের নাম সুমন বোস এবং গোবিন্দ বিশ্বাস।‌ ধৃতদের কাছ থেকে মোট ৪ কেজি ৭০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া গিয়েছে। ‌সেগুলির বাজার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি। 


    কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ হেরোইন সহ তিনজনকে এসটিএফ ধরেছে। সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে।‌ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিস হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।‌ সমস্ত দিক তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে বনগাঁ থেকে দু’জন পাচারকারী ধুবুলিয়া থানার হাঁসাডাঙা এলাকায় আসে। পলাশিপাড়া থানার নলদহর বাসিন্দা বাবুও সেখানে আসে। তারপর ওই রাতেই মাদক হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, এসটিএফ সেখানে অভিযান চালায়।‌ বিপুল পরিমাণ মাদক পাচারের আগেই তাদের ধরে ফেলে পুলিস। হেরোইনের পাশাপাশি হেরোইন তৈরির কাঁচামালও ছিল তাদের কাছে। মাদক মামলায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের বড়ো সাফল্য বলেই মনে করা হচ্ছে। 


    জানা গিয়েছে, ধৃত আব্দুল সালাম মণ্ডল ওরফে বাবুর দু’টি নার্সিংহোম রয়েছে কালীগঞ্জ ব্লকে।‌ যদিও সেই নার্সিংহোম সেভাবে চলে না। রোগীরাও সেভাবে আসে না। পুলিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, হেরোইন কারবারের কালো টাকা সাদা করার জন্যই এই নার্সিংহোম খুলে রেখেছে আব্দুল সালাম। যদিও কালীগঞ্জ ও পলাশিপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসার অপরাধ জগতে সকলে তাকে ‘বাবু’ বলেই চেনে। অতীতে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা টাকার আর্থিক লেনদেন হওয়ার বিষয়টি পুলিসের নজর এসেছিল‌। সেই টাকা নার্সিংহোমের ব্যবসার টাকা বলেই দেখায় সে। 


    আরও জানা গিয়েছে, বাবুর স্ত্রী তেহট্ট-২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ। ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনেও শাসকদলের টিকিটে দাঁড়িয়েছিল তার স্ত্রী। যদিও ভোটে হেরে যায়। কিন্তু ধৃতের সঙ্গে শাসকদলের ভালোই সখ্য রয়েছে। তেহট্ট-২ ব্লকের তৃণমূলের সহ সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ প্রণয় ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘আব্দুল আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু ও যে এরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত আমরা কেউই জানতাম না। আমরাও এই ঘটনায় স্তম্ভিত।’


    উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ ও পলাশিপাড়া থানা এলাকায় মাদক ব্যবসার জন্য খ্যাতি রয়েছে। বিশেষ করে পলাশিপাড়ার নলদহ এলাকা হেরোইন তৈরির হাবে পরিণত হয়েছে।‌ যদিও পুলিস বিগত এক বছরে লাগাতার মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়েছে। এতে কিছুটা হলেও ফল মিলেছে হেরোইনের কারবারে।
  • Link to this news (বর্তমান)