• গৌড়বঙ্গে নির্বিঘ্নে প্রথম দিনের উচ্চ মাধ্যমিক
    বর্তমান | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ ও সংবাদদাতা, মালদহ: নকল করা, প্রশ্নফাঁসের ঘটনা না ঘটলেও গৌড়বঙ্গে ঘটনাবহুল কাটল উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দিন। দূরত্বের কারণে সময়ে পৌঁছতে পারেনি পরীক্ষাকেন্দ্রে। সেজন্য পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ হতে বসেছিল উদয়পুর বালিকা বিদ্যানিকেতনের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রী সুজাতা হেমব্রমের। শেষপর্যন্ত অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক, কর্ণজোড়া ফাঁড়ির পুলিস আধিকারিকদের তৎপরতা, সর্বোপরি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কর্তার কানে খবর পৌঁছতেই ছাত্রীর জন্য কিছু একটা করার মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়। শেষপর্যন্ত পরীক্ষা শুরুর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর অতিরিক্ত সময় অনুমোদন করে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র কর্ণজোড়া হাইস্কুলে পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। সুষ্ঠুভাবেই পরীক্ষা দেয় ওই ছাত্রী। 


    রায়গঞ্জ থেকে প্রায় ৪০ কিমি দূরের রসাখোয়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রী। নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি থেকে রওনা দিলেও যানজট সহ বিভিন্ন কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে দেরি হয়। স্বাভাবিকভাবে তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কর্ণজোড়া হাইস্কুল থেকে বেরিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে সে। কিন্তু  আশা ছাড়েনি ওই পরীক্ষার্থী। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে থাকা অভিভাবকরা ছাত্রীকে নিয়ে কাছেই জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে ছুটে যান। খবর পৌঁছয় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির কানে। শেষে কর্ণজোড়া ফাঁড়ির পুলিস আধিকারিকরা আসেন জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে। ছাত্রীকে পুলিসের গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পরীক্ষা কেন্দ্র কর্ণজোড়া হাইস্কুলে। শেষে ওই ছাত্রী বেলা ১২. ৩০ মিনিট নাগাদ সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দেয়।


    উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যুগ্ম কনভেনার সুব্রত সাহা বলেন, ৪০ কিমি দূরের উদয়পুর হাইস্কুলের ছাত্রী সুজাতা হেমব্রম নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট পর পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে পৌঁছয়। আমাদের গাইডলাইনের জন্য তাকে সমস্যায় পড়তে হয়। প্রথমে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর আমরা জানা মাত্রই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যকে বিষয়টি জানাই। তিনি বিশেষ অনুমতি দেন। ছাত্রীটি অতিরিক্ত সময় পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার কয়েকদিন আমরা রায়গঞ্জ শহরে একটি স্কুলের হস্টেলে ছাত্রীর থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। 


    এদিকে, জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের স্বস্তি অক্ষুণ্ণ রেখে মালদহে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দিন কাটল নির্বিঘ্নে। প্রশ্নফাঁসের মতো অবাঞ্ছিত ঘটনার অভিযোগ ওঠেনি। পাশাপাশি নকলের অভিযোগ আসেনি বলে জানিয়েছেন জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালন কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদ্বয়। হাতেগোনা কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের অসুস্থতার ঘটনা ঘটলেও দ্রুত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাঁদের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মালদহে মোট ১৭টি মূল ভেনু সহ ১২২টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৩২ হাজার ৬৫১ জন ছাত্রছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে। ছাত্রীদের সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি। জেলায় ৪২টি পরীক্ষাকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওই কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ নজর ছিল শিক্ষা দপ্তর, প্রশাসন ও পুলিসের। 


    জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নিযুক্ত পরীক্ষা পরিচালন কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক অমল ঘোষ বলেন, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক শিক্ষিকা, জেলা শিক্ষা দপ্তর, প্রশাসন ও পুলিসের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা ও তৎপরতার কারণে প্রথম দিনের পরীক্ষা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই।


    জেলায় পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক তথা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বাণীব্রত দাস বলেন, প্রথম দিনের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে। বাকি দিনগুলিতে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।


    দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট হাইস্কুলে এক ছাত্র মোবাইল নিয়ে ঢুকতে যাওয়ার সেই সময় ধরা পড়ে যায়।
  • Link to this news (বর্তমান)