নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: দুই-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া সোমবার প্রথম দিন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হল উত্তরবঙ্গে। শিলিগুড়িতে এক ছাত্রীকে গ্রিন করিডর করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় পুলিস। দু’বছর আগের অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে জলপাইগুড়িতে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে এক ছাত্রী। কিন্তু গেটেই তাকে আটকে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় টোটো উল্টে গুরুতর আহত হয় এক ছাত্রী। সিতাইয়ের আদাবাড়ি ঘাটে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এদিন ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিতে পারেনি।
পুরনো অ্যাডমিট নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে না পেরে পরিবার নিয়ে নিজের স্কুলে এসে হম্বিতম্বি করে জলপাইগুড়ির ওই ছাত্রী। তার নতুন অ্যাডমিট পেতে স্কুল কেন উদ্যোগ নেয়নি তা নিয়ে কৈফিয়ত চায় সে। ছাত্রী শিক্ষিকাদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। গোটা বিষয়টি জানিয়ে পুলিসের দ্বারস্থ হয় ছাত্রীর স্কুল। কোতোয়ালি থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত বলেন, এক ছাত্রী পুরনো অ্যাডমিট নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। গেটে আটকে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ছাত্রী ও তার পরিবার অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
ওই ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ওই ছাত্রী সিসি পরীক্ষার্থী। একাদশে পড়ার সময় ২০২২ সালে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। পরের বছর পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করে যে অ্যাডমিট কার্ড পেয়েছিল, তা নিয়েই এদিন পরীক্ষা দিতে যায় বলে শুনেছি। কিন্তু ওই ছাত্রীকে নতুন করে পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করার জন্য বারবার জানানো হয়েছিল। কিন্তু স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পরীক্ষায় বসতে না পেরে সে স্কুলে এসে উল্টো আমাদেরই দায়ী করে। দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি পুলিসকে জানিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে, ধূপগুড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রী পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে বুঝতে পারে অ্যাডমিট কার্ড বাড়িতে ফেলে এসেছে। বিষয়টি জানামাত্র ধূপগুড়ি থানার এসআই নন্দিতা সরকার ছাত্রীর বাড়ি থেকে অ্যাডমিট নিয়ে পিঙ্ক পেট্রোল ভ্যান করে ফের তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেন। একইভাবে বানারহাটের এক ছাত্রী অ্যাডমিট কার্ড ভুলে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। তারও বাড়ি থেকে অ্যাডমিট এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করে পুলিস। ধূপগুড়ির কালীরহাট ডিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ধূপগুড়ি মহকুমা হাসপাতালে সে পরীক্ষা দিয়েছে।
অন্যদিকে, সিতাইয়ের আদাবাড়ি ঘাটের কাছে টোটো উল্টে সাবানা খাতুন নামে এক পরীক্ষার্থী মারাত্মকভাবে জখম হয়। স্থানীয়রা সিতাই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কোচবিহারে রেফার করা হয়। একটি নার্সিংহোমে তার চিকিৎসা চলছে। জেলা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক মানস ভট্টাচার্য আহত ছাত্রীকে দেখতে নার্সিংহোমে যান। তিনি বলেন, ওই ছাত্রী এদিন পরীক্ষা দিতে পারেনি।
অন্যদিকে, প্রথম দিনের পরীক্ষা স্কুলের বদলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেডে বসে দিল কুমারগ্রাম অমরপুর ৮ নম্বর বস্তির এক ছাত্রী। পরীক্ষা শুরুর পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে কুমারগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনে ভর্তি করানো হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। আলিপুরদুয়ারের মথুরা চা বাগানের এক পরীক্ষার্থী এদিন ভুল করে নিজের স্কুলেই চলে গিয়েছিল পরীক্ষা দিতে। তার স্কুলের শিক্ষকরা সঙ্গে সঙ্গে সোনাপুর ফাঁড়িতে খবর দেন। ততক্ষণে পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জিপ নিয়ে হাজির হন ফাঁড়ির ওসি অমিত শর্মা। ২০ মিনিটের মধ্যেই ওই ছাত্রীকে আলিপুরদুয়ারে তার পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় পুলিস।