নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: ২০২৬ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ফুসফুসের সংক্রমণ বা টিবি রুখতে প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাডাল্ট বিসিজি (ব্যাসিল ক্যালমেট গুয়েরিন) টিকা দেওয়ার পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছে কেন্দ্র। এই পাইলট প্রজেক্টে এবার হাওড়া শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম শুরু হল। সোম থেকে শুক্রবার যে কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে অ্যাডাল্ট বিসিজির টিকা নিতে পারবেন প্রাপ্তবয়স্করা। তবে ডায়ালিসিস চলছে বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই টিকাকরণের আওতায় আনা হচ্ছে না।
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসে জেলার প্রতিটি পুরসভা এলাকা ও ব্লকে বিসিজি টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্লক প্রশাসন বা পুরসভার সঙ্গে যৌথভাবে এই কর্মসূচি শুরু করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। হাওড়া পুরসভার রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় সাঁকরাইল ও বাগনান-১ ব্লকেও শুরু হয়েছে টিকাকরণ। গড়ে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর। হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ কিশলয় দত্ত বলেন, ‘এখন থেকে টানা ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম চলবে। ব্লাড প্রেশার কিংবা ডায়াবেটিসের রোগীরাও ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে এ রাজ্যে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩১২ জনের। যক্ষ্মা নিরাময়ে এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। প্রথম স্থানে গুজরাত ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কেরালা। এই সন্তোষজনক পরিসংখ্যানে অবশ্য থেমে থাকতে রাজি নয় স্বাস্থ্যদপ্তর। ২০২৩ সাল থেকেই স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর কাজ শুরু হয়েছিল। আশা কর্মীদের এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এবার অ্যাডাল্ট বিসিজি টিকাকরণের পাইলট প্রজেক্টে হাওড়া সহ বাঁকুড়া, নদীয়া, মুর্শিদাবাদের মতো রাজ্যের আটটি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের এক আধিকারিক বলেন, ‘হাওড়ায় যেহেতু ঘিঞ্জি জনবসতি, দূষণ বেশি, তাই যক্ষ্মা সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেশি। তবে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এই জেলা ভালো কাজ করছে। যে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, তাঁদের আগামী তিন বছর পর্যবেক্ষণে রাখার পর বোঝা যাবে সংক্রমণের হার কতটা কমেছে।’