• ইচ্ছে মতো ওষুধ খাওয়া বিপদ বাড়াচ্ছে প্রবীণদের
    এই সময় | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • কাশি শুরু হলে, ঠান্ডা লাগলে কিংবা পায়ে ব্যথা হলেই সল্টলেকের অন্তরা চৌধুরী পাড়ার দোকান থেকে ওষুধ কিনে খান। সমস্যা যে–ই মিটে যায়, তখন ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন তিনি।

    একা অন্তরা নন। শুধু সল্টলেকও নয়। বহু জায়গায় অন্তরার মতো রয়েছেন আরও অনেকেই। যাঁদের অধিকাংশ আবার বয়সে প্রবীণ। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এ ভাবে নিজের বিবেচনায় ওষুধ কিনে খাওয়ার প্রবণতা আগামী দিনে ডেকে আনছে তাঁদের বড় বিপদ। এ ভাবে ওষুধ খাওয়ার ফলে অনেকে যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তেমনই বিরল নয় মৃত্যুর ঘটনাও।

    সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)–এর একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, দেশের প্রতি ১০০ জন ষাটোর্ধ্বের মধ্যে ২৮ জনই চিকিৎসককে না–দেখিয়ে ওষুধ খেতে অভ্যস্ত। কলকাতা, গুয়াহাটি, চেন্নাই, দিল্লির প্রবীণ বাসিন্দাদের উপর করা হয় ওই সমীক্ষা। যাতে ধরা পড়ে, চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা ওই প্রবীণদের নেই, বিষয়টা কিন্তু একেবারেই তেমন নয়। সমীক্ষার রিপোর্টে আইসিএমআরের তরফে জানানো হয়েছে, অধিকাংশ প্রবীণই পেট খারাপ, জ্বর, সর্দি, হাত–পায়ে ব্যথার ক্ষেত্রে পাড়ার ওষুধের দোকান এবং ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিনের উপর ভরসা করছেন। কিন্তু ওই ওষুধ খাওয়ার পর সমস্যা মিটবে কি না, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই বা কী, সে বিষয়ে অনেকেই উদাসীন।

    মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দীপক দাসের কথায়, ‘প্রবীণদের অনেকে মনে করেন, চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি একাধিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করবেন এবং কিছু টেস্ট দেবেন। যেগুলোর প্রয়োজন তাঁর নেই। সেই ধারণা থেকেই তিনি পাড়ার ওষুধের দোকানে গিয়ে ওষুধ কিনে নেন। পাড়ার দোকানদারও চেনা মুখ বলে ওষুধ দিয়ে বসেন।’ কিন্তু ওই চিকিৎসক বলছেন, ‘এতে কিছু দিনের জন্য সমস্যা মিটে গেলেও আগামী দিনে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেক নতুন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে।’

    বার্ধক্য রোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক মজুমদারের বক্তব্য, ‘প্রবীণদের মধ্যে কয়েক জন আবার শারীরিক সমস্যা নিয়ে একবার চিকিৎসকের কাছে যান ঠিকই। তবে চিকিৎসক যে সব টেস্ট করাতে বলেন, সে সব না–করিয়ে কেবল চিকিৎসকের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ খেয়ে নেন। এমনকী, অনেকে ওষুধের ডোজ়ও নিজে ঠিক করে ফেলেন। যা ডেকে আনে বড় বিপদ।’ এই প্রবণতার জেরে কিডনি, হার্ট, লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায়, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হয়— এমনটাই বহু চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ।

    সরকারি হিসেবে, বছর দশেক আগে প্রতি ১০০ জনের ১০ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। বর্তমানে সেই সংখ্যা ১৫। আগামী ২০ বছরের মধ্যে এটা ২৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে বলে দাবি করা হয়েছে একাধিক সমীক্ষায়। এই পরিস্থিতিতে প্রবীণদের মধ্যে ইচ্ছে মতো ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে প্রচারমূলক কর্মসূচিতে জোর দেওয়ার দাবি তুলছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে দাবি উঠছে গাইডলাইন তৈরিরও।

    এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘প্রবীণদের চিকিৎসার পরিকাঠামো এখন প্রায় সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। প্রবীণদের সেবা–শুশ্রূষার জন্য আলাদা করে নার্সদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। সবার কাছে অনুরোধ, শারীরিক সমস্যা হলে কাছের হাসপাতালে যান। নিজে ডাক্তারি করবেন না। এতে কিন্তু আখেরে আপনারই ক্ষতি হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)