• তীর্থের নাম করে মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন ছেলে, শোরগোল মালদায়
    এই সময় | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    হঠাৎই ছেলে বলেছিলেন, ‘পুণ্য করতে যাবে মা? চৈতন্যধামে নিয়ে যাব তোমাকে।’ মা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন ‘চৈতন্যধাম?’ ছেলে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, মা তোমায় মালদার রামকেলিতে নিয়ে যাব।’ সংসারে নিত্য অশান্তির মাঝে ছেলের এই ভোলবদলে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি অশীতিপর বৃদ্ধার।

    ভেবেছিলেন, ভগবান হয়তো মুখ তুলে চাইলেন। পুণ্যলাভের আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল ৮০ বছরের শিবানী দাসের। মনে মনে আশীর্বাদ করেছিলেন ছেলেকে। এর পর নির্দিষ্ট দিনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ছেলের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের কান্দির বাড়ি থেকে। মালদায় পৌঁছনোর পরে আর তর সইছিল না তাঁর। অপেক্ষা করছিলেন কখন রামকেলির মন্দিরে যাবেন। এরই মাঝে মাকে ফেলে চলে যান ছেলে।

    প্রথমে বৃদ্ধা ভেবেছিলেন, ছেলে হয়তো আশপাশেই কোথাও আছেন, ঠিক ফিরে আসবেন। যত সময় এগিয়েছে, বাস্তবটা স্পষ্ট হয়েছে বৃদ্ধার কাছে। বুঝতে পারেন, ছেলে তাঁকে ফেলে গিয়েছেন অজানা শহরে। মনে পড়ে, তাঁর নামে থাকা পাকা বাড়িটাও কিছু দিন আগে কৌশলে বিক্রি করে দিয়েছেন ছেলেরা। দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পেরে অসহায় বৃদ্ধা হঠাৎ উপলব্ধি করেন, ছেলেদের কাছে মায়ের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই বিড়াল পার করার মতো তাঁকে ফেলে যাওয়া হয়েছে অন্য জেলায়।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ ইংরেজবাজার শহরের বাঁধরোড এলাকায় রাস্তার ধারে বসে কান্নাকাটি করছিলেন অসহায় বৃদ্ধা। সেই সময়ে ব্যক্তিগত কাজে মোটরবাইকে করে যাচ্ছিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলার তথা তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ দাস। বৃদ্ধাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন তিনি।

    কথা বলে জানতে পারেন, বৃদ্ধার এক ছেলে রামকেলিতে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে শহরের রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে মাকে। তাঁর উদ্যোগে মালদার একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করা হয় বৃদ্ধার। তাঁর কাছ থেকে সব শুনে ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রসেনজিৎ।

    স্বামী ছোটখাটো কাজকর্ম করতেন। তিন ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার ছিল তাঁদের। স্বামী অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। বাড়িটা ছিল শিবানীর নামে। সন্তানদের নিয়ে নিজেকে মনে মনে সুখী বলেই জানতেন তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেদের নিয়ে থাকতেন বাড়িতে। মাস কয়েক আগে ছেলেরা কৌশলে সেই বাড়ি বিক্রি করে দেন। এর পরে বৃদ্ধা কার কাছে থাকবেন, তা নিয়ে চলছিল চরম অশান্তি। তার মধ্যেই এক ছেলে মাকে এনে রেখে যান পাশের জেলায়। আপাতত বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পেলেও কান্না আর থামছে না অসহায় মায়ের। বার্ধক্যের কারণে বাড়ির পুরো ঠিকানাও ঠিক ভাবে বলতে পারছেন না তিনি।

    প্রসেনজিৎ বলেন, ‘বৃদ্ধা জানিয়েছেন, ছেলেরা তাঁর উপরে নির্যাতন করত। তাঁর কাছ থেকে তাঁর ছেলেদের নাম–ঠিকানা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে মামলাও করা হবে।’

    ইংরেজবাজার থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘ওঁকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা হয়েছে বলে শুনেছি। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হলেই আমরা মুর্শিদাবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি।’

  • Link to this news (এই সময়)