এই সময়, নয়াদিল্লি: রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলে ২০২২–এর শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন নিজেদের আগের অবস্থান বদলাল পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পিএস নরসিমহা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে শুনানিতে পর্ষদের তরফে বর্ষীয়ান আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত জানান, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার আগেই প্রার্থীদের নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতামান থাকতে হবে বলে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ পর্ষদ মেনে নিচ্ছে। আচমকা এই অবস্থান বদলের কারণ জানতে চান বিচারপতিরা। তবে ব্যাখ্যা দেননি পর্ষদের আইনজীবী। রায়দান স্থগিত রেখে দুই বিচারপতি জানান, দু’দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে লিখিত ভাবে বক্তব্য জানাতে হবে।
২০২২ সালে প্রাথমিকে ১১,৭৬৫টি শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পর্ষদ৷ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টেট–উত্তীর্ণ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডিএলএড প্রার্থীরা এবং ডিএলএড কোর্সে প্রশিক্ষণরত প্রথম বর্ষের উত্তীর্ণরাও আবেদন করতে পারবেন৷ পর্ষদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ পর্ষদের সিদ্ধান্তেই সবুজ সঙ্কেত দেন।
ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে জানায়, পাঠরত বা প্রশিক্ষণরত প্রার্থীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। পাঠ বা প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ৯৫৩৩ জন চাকরিতে যোগ দিলেও বাকি ২২৩২টি পদে নিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন কারা, সেই বিতর্ক থেকে নতুন মামলা হয়। সোমবার সেই শুনানিতেই পর্ষদের আইনজীবী জানান, তাঁরা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ মেনে নিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২–এর ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের টেট–উত্তীর্ণরা। সমস্যা দেখা দেয় ২০১৪ সালের টেট পাশ কিন্তু ডিএলএড প্রশিক্ষণহীনদের একাংশকে নিয়ে। এনসিটিই (ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন)–র বিধি মানতে ২০১৪ সালের টেট পাশ করা একাংশ ২০২০–তে ডিএলএডের দু’বছরের কোর্স করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারির সময়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হয়নি।
তবে দেখা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া যখন সম্পূর্ণ হবে, ততক্ষণে প্রশিক্ষণের শংসাপত্র পেয়ে যাবেন তাঁরা। এই যুক্তি দেখিয়েই নিয়োগের প্যানেলে কেন নাম থাকবে না, এই প্রশ্ন তুলে মামলা করেন শিক্ষক হতে চাওয়া অনেকে। প্রাথমিক ভাবে পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি তাঁদের সহায় হলেও এ বার পর্ষদ অবস্থান বদল করল। এর তীব্র বিরোধিতা করেন মামলাকারীদের আইনজীবী পিএস পাটওয়ালিয়া।