হাবরায় মা-বাবাকে খুনে মেয়ে, জামাই-সহ ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
প্রতিদিন | ০৪ মার্চ ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাকপুর: সম্পত্তির লোভে বাবা-মাকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়। সেজন্য শার্প শুটারকে সুপারি দেওয়া হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার সেই ঘটনায় সাড়া পড়েছিল এলাকায়। তিনজনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২০২০ সালের সেই খুনের ঘটনায় সাজা ঘোষণা করল বারাসত আদালত। সোমবার ওই দম্পতি ও শার্প শুটারকে যাবজ্জীবন সাজা শোনালেন বিচারক।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাবড়া থানার কুমড়া কাশিপুর এলাকায়। ওই এলাকাতেই থাকতেন বৃদ্ধ দম্পতি রামকৃষ্ণ মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী লীলারানি মণ্ডল। বাজার থেকে সাত লক্ষ টাকার বেশি দেনা হয়ে গিয়েছিল জামাই বান্টি সাধুর। সেজন্য মেয়ে নিবেদিতা সাধু ও জামাই দীর্ঘদিন ধরেই সম্পত্তি বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছিল ওই দম্পতিকে। কিন্তু ওই দম্পতি কোনওভাবেই মেয়ে-জামাইয়ের কথা শোনেননি। শ্বশুর-শাশুড়ি সরে গেলে সম্পত্তি তাদের। সেই হিসেবে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই ওই দম্পতিকে খুনের ছক কষে বান্টি।
খুনের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল শার্প শুটার অজয় দাসকে। অজয় কথা মতো কাজ করে। তদন্তে নেমে পুলিশ শুরুর দিকে ধোঁয়াশায় ছিল। মৃত দম্পতির মেয়ে-জামাইও তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করছিল। এদিকে পুলিশ বাজারে বান্টির ধারের কথা জানতে পারে। এরপর নিবেদিতা ও বান্টিকে জেরা শুরু হয়। তখনই তাদের পরিকল্পনার কথা জানা যায়। ভাড়াটে খুনি অজয়কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তদন্তকারী অফিসার রামকৃষ্ণ গুড়িয়া তিনজনকে গ্রেপ্তার করে চার্জশিট, সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেন। পাশাপাশি অজয়ের মোবাইল ফোনে থাকা ‘সুপারির কল রেকর্ড’ সংগ্রহ করে ধৃতদের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে ফরেনসিক পরীক্ষা করালে মিলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া পোড়া সিগারেটের ফিল্টার থেকে ডিএনএ প্রোফাইল বিশ্লেষণ করলে তাও বান্টি ও অজয়ের সঙ্গে মেলে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কার্তুজের খোলের সঙ্গেও খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রর ব্যালিস্টিক ম্যাচ করে যায়।
এইসব তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষীর ভিত্তিতে গত শুক্রবার তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বারাসতের পঞ্চম এডিজে আদালতের বিচারক দিপালী শ্রীবাস্তব। এরপর এদিন দোষীদের সশ্রম যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হয়। সরকারি আইজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২৬জন সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় দোষীদের সশ্রম যাবজ্জীবন-সহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে পাঁচ মাস কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়াও অস্ত্রআইনে তিন ও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”