এই সময়, খড়্গপুর: পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে হাতে অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুই প্রধান শিক্ষক। কিন্তু ছাত্রদের দেখা নেই। উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষক অন্য ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করেন, ওই দুই ছাত্রকে কেউ দেখেছে কি না? কিন্তু সেই পরীক্ষার্থীদের খোঁজ দিতে পারল না কেউই।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন এমন দৃশ্য দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েকটি স্কুলে। আবার কোথাও আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল পড়ুয়া। কিন্তু ইচ্ছা ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। বাধ সাধে অস্ত্রোপচার। এমনই নানা ঘটনায় উচ্চ মাধমিকের প্রথম দিন কাটল।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমিতে পরীক্ষার সিট পড়েছিল দেউলি সুধীর হাইস্কুল ও কালিয়াপাড়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের। দু’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দেখা গেল হাতে অ্যাডমিট নিয়ে হন্যে হয়ে দুই ছাত্রের খোঁজ করছেন।
দেউলি সুধীর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার মাজি বলেন, ‘আমার স্কুলের ও কালিয়াপাড়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের দুই ছাত্রের জন্যই আমরা এসেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ছাত্রটি স্কুলে অ্যাডমিট নিতে আসতে পারেনি। আমাদের কাছে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল সেটিও বন্ধ ছিল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ভেবেছিলাম যদি পরীক্ষা দিতে চলে আসে তখন কী হবে? তাই আমিই অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছিলাম। কিন্তু ওই ছাত্র আসেনি।’
একই কথা বলেন কালিয়াপাড়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকও। যা দেখে অভিভাবকরা বললেন, ‘প্রধান শিক্ষক তাঁর কর্তব্য পালন করেছেন। বেশ ভালো লাগল।’
আমার মনে হয়েছিল ছাত্রটি স্কুলে অ্যাডমিট নিতে আসতে পারেনি। যে মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল সেটিও বন্ধ ছিল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাই আমরা হলে অ্যাডমিট নিয়ে এসেছিলাম
প্রদীপকুমার মাজি
আবার অন্য দিকে দেখা গেল, মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তার পরীক্ষাকেন্দ্র মিশন গার্লস স্কুলে পৌঁছয়। কিন্তু দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা তালিকায় তাঁর নাম পাননি। ওই ছাত্রীর নথি পরীক্ষা শুরু হয়। দেখা যায়, মেয়েটি মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে পরীক্ষা দিতে হাজির হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলার আহ্বায়ক রামজীবন মাণ্ডি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানা গেল ওই ছাত্রীটি একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করলেও অ্যাডমিটের জন্য আবেদন করেনি। স্কুল থেকে বার্তা পাঠানোর পরেও নাকি সে আসেনি। ফলে সে এবার পরীক্ষা দিতে পারেনি।’ শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২৭,৯৬৭ জন পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ পরীক্ষা দিয়েছে। ২ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসেনি।
সবংয়ের বাদলপুর হাইস্কুলের ছাত্র প্রশান্ত পাড়িও এ বার পরীক্ষা দিতে পারেনি। শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, তিন দিন আগে প্রশান্ত মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পড়ে। পায়ে চোট লাগে। রবিবার তার অস্ত্রোপচার হয়। প্রথমে ভেবেছিল পরীক্ষা দিতে পারবে। ফলে তার পরীক্ষাকেন্দ্র বসন্তপুর হাইস্কুলে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর সময়ে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পড়েন দাসপুরের গৌরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত জানা। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসা করাতে যেতে হয়। তিনি পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে পারেননি। নিয়ম অনুযায়ী, তিনিই সেন্টার সেক্রেটারি। তিনি না থাকলে পরীক্ষা পরিচালনা করবেন কে? তড়িঘড়ি স্কুলের অন্য শিক্ষককে সেন্টার সেক্রেটারি করে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ করা গিয়েছে বলে রামজীবন জানিয়েছেন।