• সময় বেঁধে ভোটার তালিকায় সংশোধন চায় তৃণমূল
    আনন্দবাজার | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • ভোটার কার্ডের একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটার। অভিযোগ, সেই ‘ভুয়ো’ ভোটারেরা বিজেপি শাসিত রাজ্যেরও বটে। তিন দিন আগে এই অভিযোগ তোলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কারচুপির অভিযোগ তুলে রাজধানীতে আক্রমণ শানাল তৃণমূল। সোমবার নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে সরব হন তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ, কীর্তি আজাদ ও ডেরেক ও’ব্রায়েন। অভিযোগ, এটি বিরাট কেলেঙ্কারি ও ফৌজদারি অপরাধ। তৃণমূলে সাংসদদের ইঙ্গিত, বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে আঁতাঁত রয়েছে। আজ ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সময়ও বেঁধে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদেরা। পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের ‘ভুলের দায়’ স্বীকার করতে হবেও বলে দাবি তোলেন তাঁরা।

    তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক বলেন, “এখনও ভুল স্বীকার করেনি নির্বাচন কমিশন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুল স্বীকার করুক, না হলে মঙ্গলবার সকাল ন’টায় নয়া নথি সামনে আনব।” আজ মুর্শিদাবাদের কিছু ভোটারের পরিচয়পত্রের তালিকা তুলে ধরেন তাঁরা। দেখা গিয়েছে, একই এপিক নম্বর লেখা বহু কার্ড রয়েছে। ডেরেকদের দাবি, এই কার্ডগুলির বেশির ভাগই বিজেপি-শাসিত রাজ্যের বাসিন্দাদের। ডেরেক বলেন, “আমরা চাই, পশ্চিমবঙ্গে কেবল সেখানকার বাসিন্দারাই ভোট দিন। দেখা যাবে, ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, কারণ তাঁদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে গিয়েছেন, যাঁদের ভোটার আইডি কার্ডের এপিক নম্বর তাঁদেরই মতো।’’

    ভুয়ো ভোটার, একই নম্বরের একাধিক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে মমতা অভিযোগ তোলার পরে রবিবার নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায় যে, অনেক ক্ষেত্রেই এপিক নম্বর এক হলেও ভোটকেন্দ্র এবং বিধানসভা কেন্দ্র আলাদা হয়। এপিক কার্ডে যে কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, শুধু সেখানেই ভোট দেওয়া যাবে। অন্য কোথাও নয়। ডেরেক সোমবার পাল্টা অভিযোগ করে জানান যে, তৃণমূল এই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করার কথা ঘোষণার পরেই বিষয়টি ধামাচাপ দিতে রবিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কমিশন। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশনের প্রশংসা করব, কারণ তারা অন্তত স্বীকার করেছে যে, একই নম্বরে একাধিক ভোটারের নাম রয়েছে। কিন্তু এটা যে একটি বড় কেলেঙ্কারি, তা তারা স্বীকার করছে না এখনও।’’

    এই অবস্থায় ভোটার তালিকা নিয়ে ৬ মার্চ, বৃহস্পতিবার দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে রাজ্য স্তরে গঠিত কমিটির ৩৬ সদস্যকে নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মমতার দেওয়া নির্দেশের পরই তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা দলীয় স্তরে রাজ্যব্যাপী ‘স্ক্রুটিনি’ শুরু করেছে। কিছু জায়গায় ‘গরমিল’ পাওয়া গিয়েছে বলেও দলের দাবি।

    এই অবস্থায় সব জেলার নেতৃত্বকে ৬ তারিখ কলকাতায় বৈঠকে ডেকেছেন মমতার গড়ে দেওয়া এ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান সুব্রত বক্সী। বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থার প্রতিনিধিদেরও। দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের ৩৬টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে এই বৈঠক করবেন অভিষেক। সেখানেই জেলার নেতাদের প্রাথমিক রিপোর্টের পর্যালোচনা করা হবে। ৬ তারিখেই কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের অফিসে যাবে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধিদল।

    বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ,‘‘তৃণমূল যে ভাবে বাংলাদেশিদের নাম ভোটার তালিকায় ঢোকাতে চাইছে এবং বাংলাভাষী কিংবা অ-বাংলাভাষী হিন্দু ভোটারদের নাম বাদ দিতে চাইছে, প্রয়োজনে আমরা তার বিরুদ্ধে পথে নামব।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)