পানাগড়কাণ্ডে এ বার গ্রেফতার হলেন মৃতা সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িচালক রাজদেও শর্মা। সুতন্দ্রার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সোমবার রাতে কাঁকসা থানার পুলিশ ভদ্রেশ্বর থেকে ওই গাড়ির চালককে গ্রেফতার করে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পানাগড়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে চন্দননগরের বাসিন্দা, একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার সুতন্দ্রা (২৭)-র। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ ওঠে, কয়েক জন মত্ত যুবক একটি সাদা গাড়ি করে এসে সুতন্দ্রাদের নীল গাড়িটিকে বার বার ধাক্কা দেন। তার ফলেই উল্টে যায় সুতন্দ্রাদের গাড়ি। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তরুণীর। ঘটনার পর পর এমনই দাবি করেছিলেন ঘটনার সময় সুতন্দ্রার গাড়িতে থাকা সহকর্মীরা এবং গাড়িচালক। কিন্তু দিন কয়েক পরেই নিজের বয়ান বদলান রাজদেও। তিনি দাবি করেন, ‘দিদির (সুতন্দ্রা) কথাতেই’ ১০০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি ছুটিয়েছিলেন! আর তাতেই দুর্ঘটনা।
‘ইভটিজ়িং’-এর তথ্য প্রথম থেকেই খারিজ করেছে পুলিশ। তারা সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে দাবি করে, রেষারেষির কারণেই গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছিল পানাগড়ে। সুতন্দ্রাদের গাড়িটিকে বার বার ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে পুলিশের দাবি ছিল, তরুণীর গাড়িই যুবকদের সাদা গাড়িটিকে তাড়া করছিল ওই রাতে। পুলিশ একাধিক সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ্যে আনতে থাকে। সেই আবহেই রাজদেও নিজের বয়ান বদলে ফেলেন। তাঁর দাবি, ‘‘ওই সাদা গাড়িটা আমাদের গাড়িতে প্রথমে ধাক্কা দিয়েছিল। তখন ম্যাডামই বলেছিল ওই গাড়িটার পিছনে ধাওয়া করতে। জাতীয় সড়ক ছেড়ে লোকাল রোডে নেমে যায় ওদের গাড়িটা। ম্যাডামের কথায় আমি লোকাল রোডে গাড়ি নামাই। গাড়ির গতিবেগ প্রায় ১০০ ছিল। আমি সামলেই নিতাম। কিন্তু ওই টয়লেটটায় ধাক্কা লেগে উল্টে গিয়েছিল আমাদের গাড়িটা।’’
বয়ান বদল করায় সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় গত ১ মার্চ চন্দননগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সুতন্দ্রা এবং বাবলু (সাদা গাড়ির চালক)-এর গাড়িতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সকলকেই তদন্তের আওতায় আনা উচিত। পুলিশ স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হবেই। কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখতে নারাজ তনুশ্রী। তাঁর অভিযোগ পাওয়ার পরেই ভদ্রেশ্বরের দাস পাড়া থেকে রাজদেওকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতের বিরুদ্ধে বিএনএস-এর ১০৫,১২৫(এ), ২৮১,৩২৪(৫) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পানাগড়কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই। দিন কয়েক আগেই ওই সাদা গাড়ির চালক বাবলুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।