• এখনও থমথমে যাদবপুর, উপাচার্যকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিলেন আন্দোলনরত ছাত্রেরা
    আনন্দবাজার | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • সোমবারের পর মঙ্গলবারও থমথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। চলছে ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি। মঙ্গল এবং বুধবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ডিএসএফ-সহ কয়েকটি অতিবাম ছাত্র সংগঠন। এই দু’দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ এবং গবেষণাগার (ল্যাবরেটরি) বন্ধ রাখার ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের ‘ধর্মঘটে’ নেই এসএফআই। শহর-রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পৃথক কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তারা।

    সোমবার রাতের জিবি বৈঠকের পর ছাত্রদের তরফে বেশ কয়েকটি দাবি উঠে এসেছে। ছাত্রদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পাশাপাশি, আহত ছাত্রদের চিকিৎসার খরচও বহন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেই। এ ছাড়াও, যে সমস্ত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা উপাচার্যকে সরকারের সঙ্গে কথা বলে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উল্টো দিকে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে ছাত্রছাত্রীদের উপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থাও করতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি উপাচার্য ক্যাম্পাসে না আসেন, তা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রেরা। প্রয়োজনে উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থানেও বসবেন তাঁরা। এমনই নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তিন ফ্যাকাল্টির পড়ুয়াদের সম্মিলিত জিবি বৈঠকে। ক্যাম্পাসে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য শীঘ্রই একটি গণ কনভেনশনেরও ডাক দিতে চলেছেন পড়ুয়ারা।

    তবে পড়ুয়ারা সময়সীমা বেঁধে দিলেও মঙ্গলবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। সূত্রের খবর, তিনি এই মুহূর্তে অসুস্থ। এখনও তাঁর রক্তচাপ ওঠানামা করছে। অসুস্থতার কারণে বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। তবে বাড়ি থেকেই খোঁজখবর রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরে শনিবার রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। উপাচার্যের পরনে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উপাচার্য। ভাস্করের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে আমার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। ডাক্তার আমাকে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলেছেন। তাই ডাক্তার পরামর্শ দিলেই আমি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব।’’ আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর ভরসা রাখতেও বলেছেন ভাস্কর।

    মঙ্গলবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু বিভাগের পরীক্ষা রয়েছে। বেশ কিছু বিভাগে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের পরীক্ষা রয়েছে। ল্যাটারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও সেমিস্টারের পরীক্ষা রয়েছে মঙ্গলবার। তবে বড়সড় পরীক্ষা বন্ধ না হলেও বেশ কয়েকটি বিভাগে মঙ্গলবারও পঠনপাঠন বন্ধ থাকছে। কোনও সংগঠনের ডাকে নয়, বরং ওই বিভাগের পড়ুয়ারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার এসএফআইয়ের ডাকা ছাত্র ধর্মঘটেও মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছিল যাদবপুরে। অধ্যাপকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইংরেজি, ইতিহাস-সহ কিছু কিছু বিভাগে পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে সে সবের মাঝেই গণজ্ঞাপন বিভাগের সেমেস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন পড়ুয়ারা। কলা বিভাগেও ‘ক্লাস টেস্ট’ হয়েছে স্বাভাবিক ছন্দেই।

    সোমবার রাজ্যের সকল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছিল বামেদের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। মঙ্গলবারও এসএফআইয়ের তরফে শহর ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে মেদিনীপুরে, বেলা ৩টে নাগাদ কলেজ স্ট্রিটে এবং হাওড়ায়, বিকেল ৪টে নাগাদ বারুইপুরে এবং সন্ধ্যা ৬টার সময় নাগেরবাজারে মিছিল করবেন বাম ছাত্রযুবরা।

    শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে যাদবপুরে ধিক্কার মিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূলপন্থী অধ‍্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’। যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিলে করবে তারা। গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। তাঁকে ঘিরে যখন বিক্ষোভ চলছে, সেই সময় আহত হন মন্ত্রী। জখম হন শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো দুই পড়ুয়াও। অভিযোগ, দুই পড়ুয়ার মধ্যে এক জনকে চাপা দিয়েছে মন্ত্রীর গাড়ি। অন্য জনের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গিয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)