বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছেলেকে রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়তে দেখার ধাক্কা হয়তো সামলে নিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ইংরেজির প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়ের মা। তবু মঙ্গলবার ইন্দ্রানুজের মা বর্ণালী বসু রায় যখন কেপিসি হাসপাতালে ঢুকলেন, তখনও বিধ্বস্ত তিনি। ছেলেকে এ ভাবে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখে আর পাঁচ জন মায়ের ঠিক যেমন হয়, বর্ণালীরও মনের অবস্থা তখন ঠিক তেমনই। এই সময় অনলাইনকে ফোনে জানালেন, শনিবার যে ঘটনা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে দুর্ঘটনা, কখনওই তা ইচ্ছাকৃত নয়। তবে একই সঙ্গে বর্ণালীর বক্তব্য, ‘দুর্ঘটনা ঠিকই। তবে এটা ইচ্ছা করলে এড়ানো যেত। যাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে চেপে ধরে সে দিন গাড়িতে তুলে দিলেন, তাঁরা চাইলে, গাড়ির সামনে চলে আসা ছাত্রদেরও তো সরিয়ে দিতে পারতেন।’
বর্ণালী বসু রায় নিজে শিক্ষা জগতের মানুষ। সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ফিজ়িওলজি পড়ান তিনি। শনিবারের পর থেকে এই ঘটনা ঘিরে যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে কী মন্তব্যই করলেন তিনি? ফোনের ও পার থেকে ভেসে এলো বর্ণালীর দৃপ্ত কণ্ঠের উত্তর, ‘আমি শিক্ষা জগতের লোক। আমি কোনও রাজনৈতিক তরজায় যাব না। শিক্ষামন্ত্রী গতকাল ওর বাবাকে ফোন করেছিলেন। ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তিনি একেবারেই আগ্রহী নন।
ইন্দ্রানুজের মা জানান, শনিবারের ঘটনার পর ছেলের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। ঠিক কী ঘটেছিল, সংবাদমাধ্যমকে তা সে দিনই জানিয়েছিলেন ইন্দ্রানুজ। এ দিন তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী কিন্তু সে দিন খুব ভালো করেই ইন্দ্রানুজের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ও নিজেও সেটা আমাকে বলেছে। কিন্তু কয়েক জন মিলে শিক্ষামন্ত্রীকে জোর করে টেনে গাড়িতে তুলে দিল। তারাই যদি ছেলেগুলোকেও গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে দিত, তা হলে ভালো হতো। কেউই চাইবে না কাউকে চেপে বেরিয়ে যেতে।’
ইন্দ্রানুজের মায়ের সংযোজন, ওই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ইন্দ্রানুজ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি, পড়ে গিয়েছিলেন। ছেলের আঘাতের ব্যাপারে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খুব ভারী কিছুর আঘাত লেগেছে ইন্দ্রানুজের। তা গাড়ির চাকার আঘাতও হতে পারে, সম্ভবত তাতেই আহত হয়েছেন ইন্দ্রানুজ। চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে ৭২ ঘণ্টা ইন্দ্রানুজকে চিকিৎসকেরা অবজ়ার্ভেশনে রেখেছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবারই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ফোন করেন ইন্দ্রানুজের বাবা অমিত রায়কে। দুঃখপ্রকাশ করেন শনিবারের ঘটনার জন্য। ইন্দ্রানুজের মায়ের বক্তব্য, ‘শিক্ষামন্ত্রী এ নিয়ে খুবই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে খুবই সহানুভূতির সঙ্গে কথা বলেছেন।’