• হারিয়ে যাওয়া নাট্যকে ফেরাতে মরিয়া শ্যামপুরের পাঠাগার
    এই সময় | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • রাকিব ইকবাল, শ্যামপুর

    পরিবারে নিদারণ আর্থিক সঙ্কট। সংসার টানতে গিয়ে আজীবন অবিবাহিতা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন বাড়ির মেজো মেয়ে। নিজে কষ্ট সহ্য করে বাকিদের মুখে হাসি দেখাতেই তার আনন্দ। একে একে সমস্ত বোনের সংসার হলো, কিন্তু আবদারের তো অন্ত নেই। কিন্তু দিদির ক্লান্তি নেই। জীবনযুদ্ধে মেজো মেয়ে যেন শরৎবাবুর কলম থেকে উঠে আসা আর এক মেজদিদি।

    ও দিকে, দুষ্টু মামা বটকৃষ্ণ গোপনে নেশায় বুঁদ করে রেখেছে ভাগ্নে–কে। সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার মতলব এঁটেছে সে। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় মেজদির দৃঢ়তায়। সংসার আবার ফেরে ছন্দে।

    গল্পের মতো লাগছে? গল্প–ই তো! এবং তা ফুটে উঠেছে নাটকের আকারে, যার নাম ‘মোমের আলো’। তা আবার মঞ্চস্থ–ও হয়েছে। কুশীলব শ্যামপুরের আমড়াদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। একটা সময় এই গ্রামে নিয়মিত হতো নাটক, বিভিন্ন ধরনের যাত্রা। গ্রামের সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল গর্ব করার মতো। গ্রামের মানুষই নিয়মিত অংশ নিতেন এই ধরনের নাটক, যাত্রাপালায়। তার পরে তা হারিয়ে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে।

    কিন্তু ভুলে গেলে তো চলবে না। তাই পুরোনো পরিবেশকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিল হাওড়া গ্রামীণের শ্যামপুর রাজীবপুর অগ্রণী পাঠাগার। এই পাঠাগার ৭৫ বছরে পা রাখল এ বার। গ্রামের হারিয়ে যাওয়া সেই নাট্যচর্চাকে আবার ফিরিয়ে আনতে মরিয়া এই পাঠাগার। তাদের মন্ত্র, ‘চলো, সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে আবার ফিরি নাটকে।’ আয়োজিত হয়েছে বেশ কয়েকটি নাটক। দল বেঁধে সেই নাটকে অংশ নিয়েছেন গ্রামের ছেলে–মেয়েরা। নতুন প্রাণের স্পন্দনে ফের জেগে উঠেছে পুরো গ্রাম।

    গ্রন্থাগারিক শাশ্বত পাড়ুই বলছিলেন, ‘টানা দু’মাস ধরে চলেছে মহড়া। স্ত্রী–পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এতে অংশ নিয়েছে। আমরা তো এই আবহ–ই গ্রামে আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছি। নাটকের থেকে সেরা মাধ্যম আর কী থাকতে পারে!’ ৭৫ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় রাখতে বেরিয়েছে মিছিল। তার স্লোগান ছিল, ‘বই পড়ো, জীবন গড়ো।’ শাশ্বত বলছিলেন, ‘বই পড়ার সঙ্গে নাটকেরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা দু’টো বিষয়কে মিশিয়ে দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি। গ্রামের মানুষের উৎসাহ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি।’

    গ্রন্থাগারের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে হয়েছিল বসে আঁকো, যেমন খুশি সাজো, ক্যুইজ় প্রতিযোগিতা। অংশ নিয়েছিলেন আশপাশের স্কুলের শিক্ষক–শিক্ষিকারাও। শেষ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমড়াদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মৌসুমি মাইতি, উপ–প্রধান জয়ন্ত পাত্র প্রমুখ।

    ১৯৫০ সালে জন্ম হয়েছিল এলাকার মানুষের ঐকান্তিক ভালোবাসায় যে গ্রন্থাগারের জন্ম হয়েছিল, ৭৫ বছরে পা রেখে সে দেখাচ্ছে নতুন উদ্যমে এগিয়ে থাকার মন্ত্র।

  • Link to this news (এই সময়)