‘টি ওয়ান’ তকমায় চিহ্নিত, জিনাত সঙ্গীকে বন্দি করে রেডি কলার পরিয়ে পালামৌ নিয়ে যাবে কর্তৃপক্ষ!
প্রতিদিন | ০৪ মার্চ ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চলতি ব্যাঘ্র শুমারিতে ভবঘুরে জিনাত সঙ্গীকে ঝাড়খণ্ডের পালামৌ টাইগার রিজার্ভের বাঘ বলে চিহ্নিত করল কর্তৃপক্ষ। তাকে ‘টি ওয়ান’ তকমা দিয়ে এবার বন্দি করে রেডিও কলার পরাতে চায় পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প। সেই কারণেই পরামর্শ চেয়ে ঝাড়খন্ড বনবিভাগ ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটিকে সম্প্রতি চিঠি লিখেছে। পালামৌ টাইগার রিজার্ভ চাইছে, একটি বিশেষ টিম তৈরি করে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করতে। তারপর বন্দি অবস্থায় গলায় রেডিও কলার পরিয়ে তাকে পালামৌ ব্যাঘ্র এলাকায় ছাড়তে।
ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে এই কাজ করতে চাইছেন তারা। বিধি মোতাবেক ওই বিশেষ টিমে বনদপ্তর, ট্র্যাকিং করার লোকজন-সহ বায়োলজিস্ট ও শুটার থাকবেন। পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টার প্রজেশকান্ত জেনা জানান, “দলমা ও সন্নিহিত পুরুলিয়ায় ঘুরে বেড়ানো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের হোম রেঞ্জ পালামৌ। প্রায় ২ বছর ধরে সেখানে রয়েছে। তাই ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটিকে চিঠি লিখে পরামর্শ চেয়েছে যাতে এই বাঘটিকে রেডিও কলার পরিয়ে পালামৌতে ছাড়া যায়।”
২০২১ সালের ব্যাঘ্র শুমারিতে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার গণনায় না এলেও এবার তাকে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ গণনায় চিহ্নিত করে। তার বয়স বর্তমানে ৫। পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবঘুরে জিনাত সঙ্গীকে নিয়ে পালামৌতে মোট ৬টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। ছত্তিশগড়ের বলরামপুর অর্থাৎ গুরু- ঘাসিদাস ন্যাশনাল পার্ক এলাকাতে গত বছর ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বাঘটি একেবারেই হিংস্র নয়। মানুষ এড়িয়ে চলাচল করে। গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে বাংলা-ঝাড়খণ্ডে তার প্রমাণ পেয়েছেন সেখানকার মানুষজন।
পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকের কথায়, বর্তমানে বাঘ থাকার মত পরিস্থিতি দলমায় নেই। তবুও ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ ওই এলাকায় যাতে বাঘটিকে সুরক্ষিত করা যায় তার সমস্ত রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি ধারাবাহিক নজরদারি চলছে। কিন্তু কোনভাবেই বাংলার মতো দলমা এলাকাতেও বাঘের নির্দিষ্ট অবস্থান জানানো হচ্ছে না। এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ২ মাস ধরে বাংলা-ঝাড়খণ্ড ডেলি প্যাসেঞ্জারি করায় এই বাঘটিকে বাংলা চলতি ব্যাঘ্র শুমারিতে গণনায় আনেনি। কিন্তু বাঘটিকে পশ্চিমবঙ্গের বলে দাবি করছে অরণ্য ভবন। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন,”এই বাঘটি যেহেতু বারে বারে বাংলা-ঝাড়খণ্ডের মধ্যে আসা-যাওয়া করছে তাই আমরা এটিকে গণনার মধ্যে ধরতে পারিনি।” রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় বলেন, “গণনায় নাও আসতে পারে। কিন্তু বাঘটি এখন পশ্চিমবঙ্গের।”
গত ৩১ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল বনাঞ্চল এলাকায় এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব বুঝতে পারে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ। তারপর ১২ জানুয়ারি প্রথম এই বাঘটি বাংলায় প্রবেশ করে। তারপর ঝাড়খণ্ড ফিরে গিয়েও তিন- তিনবার বাংলায় এসেছে। যদিও বর্তমানে ওই জিনাত সঙ্গী ঝাড়খণ্ডের দলমাতে রয়েছে। গত ১ মার্চ আবারও তার ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় বন্দি হয়।