শাহজাদ হোসেন, জঙ্গিপুর: দীর্ঘদিন যাবৎ গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন নিয়ে অভিযোগ বাংলাদেশের যে গ্রীষ্মের মরশুমে ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে তারা পর্যাপ্ত জল পায় না। যদিও ভারতের তরফে বার বার দাবি করা হয়েছে, জলপ্রবাহের স্বাভাবিক ওঠানামার কারণে জলের পরিমাণ কমবেশি হয়ে থাকে। মঙ্গলবার ভারতের সেই দাবিকেই মান্যতা দিলেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান মহম্মদ আবুল হোসেন। এদিন ফরাক্কা ব্যারাজ পরিদর্শন করে ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের ১১ সদস্যের নেতা আবুলের স্বীকারোক্তি, “প্রাকৃতিক কারণেই জলপ্রবাহ কমে থাকে নদীতে”।
ওপার বাংলায় ভারত বিদ্বেষের আবহে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের এই সফর ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। সোমবার শতাব্দী এক্সপ্রেসে ফরক্কার উদ্দেশে রওনা দেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি। সন্ধে নাগাদ নিউ ফরাক্কা স্টেশনে পৌঁছন তাঁরা। প্রতি প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান ফরাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আরডি দেশপান্ডে। এর পর মঙ্গলবার সকালে ব্যারাজ পরিদর্শন করেন প্রতিবেশী দেশের নদী বিশেষজ্ঞরা। গঙ্গা থেকে পদ্মায় প্রবাহিত জলের পরিমাণ ও অবস্থা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। গঙ্গা থেকে জল কী প্রক্রিয়ায় পদ্মায় প্রবাহিত হচ্ছে, তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দলটি।
ব্যারাজ পরিদর্শনের পর ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান মহম্মদ আবুল হোসেন বলেন, “জানুয়ারি মাসে আমাদের জল প্রবাহ ভালো ছিল। ফেব্রুয়ারিতে কমেছে। জল কমা একটা প্রাকৃতিক বিষয়।” আরও বলেন, “যাবতীয় কার্যক্রম জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে। চুক্তির মেয়াদ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে বিশেষ কমিটি। কলকাতায় রুটিন বৈঠক হবে।”
আগামী ৬ মার্চ ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের ৮৬তম বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা গঙ্গা-পদ্মার জলবণ্টন ছাড়াও তিস্তা-সহ ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়ে আলোচনা করবেন। পরদিন ৭ মার্চ কলকাতায় একটি বিলাসবহুল হোটেলে কারিগরি পর্যায়ের মিটিং হবে বলেও জানা গিয়েছে। ৮ মার্চ কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নির্দিষ্ট উড়ানে ঢাকা রওনা হবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল।
প্রসঙ্গত, হাসিনার পতনের পরে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির শুরু। সংখ্যালঘু অত্যাচার, চিন্ময় প্রভুকে গ্রেপ্তারি নিয়ে তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ওপারে। ভারত বিদ্বেষের সেই আবহে গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের ভারত সফর তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেই নয়, ভবিষ্যতের জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এই সফর।