• ঘাটের জলে লবণ বাড়ছে গঙ্গায়, ক্ষতির শঙ্কা জলপ্রকল্পে
    প্রতিদিন | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • নিরুফা খাতুন: ঘাটের কাছে গঙ্গাজলে বাড়ছে লবণের পরিমাণ। নোনা জলের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকলে ভবিষ‌্যতে কলকাতা পুরসভার জলশোধনাগার প্ল‌্যান্টগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর জলশোধনাগার প্ল‌্যান্ট ক্ষতি হলে জলসংকটে ভুগতে পারে মহানগর। এমনটাই আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

    ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন নামে এক সংস্থার উদ্যোগে গঙ্গার ঘাটের জল ও জলজ প্রাণীদের নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। সমীক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী। প্রথম ধাপের এই সমীক্ষায় কলকাতা থেকে বারাকপুর পর্যন্ত ঘাটগুলির জল পরীক্ষায় ব‌্যাপক মাত্রায় লবণাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। স্বাতী জানান, সাধারণত নদীর জলে ১০০ পিপিটি (পার্টস পার ট্রিলিয়ন) স‌্যালিনিটি বা লবণাক্ত থাকে। এটা স্বাভাবিক মাত্রা। এখানে ১৫০ পিপিটি পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা হয়। সেখানে গঙ্গার ঘাটের জলে লবণের মাত্রা কোথাও ২০০ পিপিটি, কোথাও ২৮০। এটা মাত্রাতিরিক্ত। এভাবে বাড়তে থাকলে কলকাতাবাসীর জন‌্য ভয়ের বিষয়। তাঁর বক্তব‌্য, জলে লবণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভবিষ‌্যতে পরিস্রুত করতে গিয়ে পুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল‌্যান্টগুলিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব শহরবাসীর ওপর পড়বে। জল সংকট দেখা দিতে পারে।

    গঙ্গার জলে লবণাক্ত প্রভাব বা মাত্রা বেড়েছে এ ব‌্যপারে কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগও ওয়াকিবহল। তবে এখনই ভয় পাওয়ার মতো সময় আসেনি, মত সংশ্লিষ্ট বিভাগের। শহরে একটা বড় অংশের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয় পলতা শোধনাগার থেকে। এ ছাড়া গার্ডেনরিচ, ওয়াটগঞ্জ, জোড়াবাগান ও ধাপার জয় হিন্দ প্ল‌্যান্ট থেকে জল সরবরাহ করা হয়। পুর-জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক জানান, গঙ্গার জলে লবণাক্ততা যে বাড়ছে না তা বলব না। এতে অবশ‌্য প্ল‌্যান্টে কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা এখনই দেখছি না। সেখানে উন্নতমানের মেশিনও রয়েছে।

    গঙ্গার জলে লবণাক্তভাব এত বাড়ছে কেন? এক্ষেত্রে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব উষ্ণায়নকে দায়ী করছেন। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কথায়, বিশ্ব উষ্ণায়নে প্রতি বছরে ২৬৭ বিলিয়ন টন হিমবাহ গলছে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বছরে প্রায় ০.৭৪ মিলিমিটার করে বাড়ছে। স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের এই উচ্চতা বৃদ্ধি গঙ্গায় নোনা জলের মাত্রা বেশি হওয়ার অন‌্যতম একটা কারণ। সমুদ্রের নোনা জল নদীতে এসে মিশছে। যে কারণে কলকাতায় গঙ্গার পাড়েও এখন ম‌্যানগ্রোভ গজিয়ে উঠছে। জলজ প্রাণীর ওপরও প্রভাব পড়বে। এখন যেমন ফরাক্কায় কুমির ঢুকে পড়ছে। অদূর ভবিষ‌্যতে কলকাতার গঙ্গায়ও কুমির ঘুরতে দেখা গেলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। অবশ‌্য গঙ্গার জলে লবণাক্তভাব বৃদ্ধি নিয়ে নদী বিশেষজ্ঞ তথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম‌্যান ড. কল‌্যাণ রুদ্র অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না। তাঁর বক্তব‌্য, এখন বৃষ্টি নেই। শুষ্ক মরশুম। এই সময় জলে লবণাক্তভাবের পরিমাণ একটু বেডে় যায়। বর্ষায় লবণাক্তের পরিমাণ কম থাকে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)