• ‘আমার কাছে এত রোগী আসে, অন্যদের গাত্রদাহ হচ্ছে’, বলছেন পান্ডুয়ার সেই নিতাই ডাক্তার
    এই সময় | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • পান্ডুয়ার এক আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই চিকিৎসক নিতাই সেনাপতি এ বার দাবি করলেন, তাঁকে হিংসা করে লোকজন এ সব করছেন। লোকে তাঁর পসার সহ্য করতে পারছে না।

    পান্ডুয়ায় প্রায় ২০ বছর ধরে চেম্বার চালাচ্ছেন নিতাই সেনাপতি। এলাকায় বেশ নাম আছে ‘ডাক্তারবাবু’-র। জ্বর, পেট খারাপ, হাঁচি, কাশি, শরীর দুর্বল, প্রেশার লো, সুগার হাই—রোগ যাই হোক না কেন, নিতাই ডাক্তারই ভরসা। শুধু পান্ডুয়া নয়, আশেপাশের এলাকার লোকজনও তাঁর উপরই ভরসা রাখেন।

    সেই ডাক্তারের বিরুদ্ধেই ওঠে সাংঘাতিক অভিযোগ। নিতাই সেনাপতি আয়ুর্বেদের ডাক্তার হয়েও নাকি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের প্রেসক্রিপশন লেখেন। পান্ডুয়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মঞ্জুর হোসেনের কাছে এ নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়ে। এর পরই সোমবার রাতে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষকে নিয়ে মঞ্জুর হোসেন ওই চিকিৎসকের চেম্বারে যান। কাগজপত্র নিয়ে পান্ডুয়া ব্লক অফিসে দেখা করতে বলেন। পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ নিশাপতি রক্ষিত জানান, রাতেই মুচলেকা দেন ডাক্তার সেনাপতি—আর তিনি অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করবেন না।

    যদিও নিতাই সেনাপতির দাবি, ‘আমি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, আয়ুর্বেদ চিকিৎসাই করব। তবে আমাদের কাউন্সিলের নির্দেশ আছে, ৬৭টি এই ধরনের ওষুধের নাম লিখতে পারি।’ যদিও হুগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্ক মৌলি কর বলেন, তাঁর কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ না এলেও, বিষয়টি কানে গিয়েছে। এ ভাবে কোনও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বা হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক অ্যালোপ্যাথির চিকিৎসা করতে পারেন না। আর ৬৭ ওষুধের যে নিয়মের কথা বলেছেন, তা প্রাইভেট চেম্বারে করা যায় না। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যদি কোনও চিকিৎসক নিযুক্ত থাকেন, সেখানে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ দেওয়া হয়।

    জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এও জানান, যদি নির্দিষ্ট করে কোনও অভিযোগ হয়, সেটা ব্লক প্রশাসনের যাঁরা আছেন, তাঁরা দেখবেন। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তিনিও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। রিষড়ার বাসিন্দা নিতাই সেনাপতি বলেন, ‘আমি দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস থেকে এমডি আয়ুর্বেদ পাশ করেছি। প্রাইভেট আয়ুর্বেদ কলেজগুলিতে ফ্যাকাল্টি হিসাবে কাজ করি। পান্ডুয়াতে আমার প্রাইভেট চেম্বার রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা দিই মানুষকে।’

    ডাক্তারবাবুর সংযোজন, ‘দীর্ঘদিন চিকিৎসার কারণে রোগী বেড়েছে। সেটাই অন্য ডাক্তারদের গাত্রদাহের কারণ হতে পারে। আমাকে যখন ব্লক অফিসে ডেকে নিয়ে গেল, আমি সব কাগজ দেখিয়েছি। কিন্তু কোনও লিখিত অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দেখাতে পারেনি।’

    এও জানান, এই ঘটনায় তাঁর মন ভেঙে গিয়েছে। তাই তিনি আর পান্ডুয়ায় চিকিৎসা করাতে যাবেন না। এ দিকে তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতেন যাঁরা, তাঁদেরও একই সুর। ডাক্তারের নামে এমন কথা শুনে ঘাবড়েই গিয়েছেন। স্থানীয় সুজয় কর্মকার নামে এক যুবক জানান, কিছু হলেই এই ডাক্তার ভরসা ছিল। তবে যা হলো, এর পর আর তাঁর কাছে যাবেন না।

  • Link to this news (এই সময়)