জন্মের সময় কঠিন অসুখে পড়েছিল পুত্র রুদ্রনীল। সেই রোগের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় সোমনাথ রায়কে! অগত্যা টাকার জন্য নিজের অটোও বিক্রিও করেন। এমনকি, ধারও নিতে হয়েছিল। তবে শোধও করে দিয়েছিলেন সোমনাথ। তার পরও কেন সপরিবার আত্মহত্যা করলেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না রামলালবাজার-গড়িয়া রুটের অটোচালক অশোক দাস। ওই রুটেই অটো চালাতেন সোমনাথও।
মঙ্গলবার হালতু পূর্বপল্লিতে নিজের বাড়ি থেকেই সোমনাথ এবং তাঁর স্ত্রী-পুত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আড়াই বছরের পুত্রকে নিজের সঙ্গে বেঁধে সিলিং থেকে ঝুলে পড়েন সোমনাথ। স্ত্রী সুমিত্রাও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। কেন তাঁরা এমন চরম পদক্ষেপ করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রকাশ্যে আসছে নানা কারণও। কেউ বলছেন আর্থিক অনটনের কথা, কেউ আবার বলছেন জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের বিষয়। যদিও প্রকৃত কারণ কী, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সোমনাথ পেশায় অটোচালক। রামলালবাজার-গড়িয়া রুটে তাঁর দু’টি অটো চালাত। একসময় তাঁর দু’টি অটো ছিল। কিন্তু পুত্রের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে একটা অটো বিক্রি করতে বাধ্য হন সোমনাথ। এমনই জানালেন অশোক। তাঁর কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগে অটো ইউনিয়নের থেকে আট হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন সোমনাথ। কিন্তু সোমবারই তা শোধ করে দেন।’’
সোমনাথের অটো ভাড়াতেও খাটত। এক জন তাঁর অটো চালান। সোমবার তাঁকে সোমনাথ জানিয়েছিলেন, পরিবার নিয়ে তিনি বেড়াতে যাবেন। কিন্তু অটোর চাবি ওই চালককে দেননি সোমনাথ। অন্যান্য দিনে অটোর চাবি সোমনাথের থেকেই নিতে হত। অশোক জানান, সোমবার চাবি দেননি সোমনাথ। তিনি জানিয়েছিলেন অটোতেই চাবি রাখা থাকবে। দেখা যায়, সেই অটোতে চাবি ছাড়াও ছিল দু’হাজার টাকা। কেন অটোতে অত টাকা রেখেছিলেন সোমনাথ, তা এখনও অজানা। সেই বিষয়ে কিছু বলতেও পারছেন না অশোক বা তাঁর বন্ধুবান্ধব।
পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন জনের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। সুমিত্রার আত্মীয়দের দাবি, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণেই শিশুসন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা-মা। ঘরের দেওয়ালে লেখা সুইসাইড নোটও সেই ইঙ্গিতই করছে। সেখানেও সম্পত্তি নিয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ করা রয়েছে। যাঁদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, সোমনাথের সেই মামা, মামি এবং মাসিকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।