উপস্থিতি কম থাকায় পরীক্ষায় বসতে বাধা, হাইকোর্টে ঝালদা আইটিআই’র পড়ুয়ারা
বর্তমান | ০৫ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: রেজিস্ট্রেশন থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে পারলেন না পুরুলিয়ার ঝালদার সরযূপ্রসাদ গভর্নমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের শতাধিক পড়ুয়া। ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এবছর বৃত্তিমূলক বিভাগে (ভোকেশনল) উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ৩০ জন পড়ুয়ার। বৃত্তিমূলক বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে পরীক্ষায় বসার কথা ছিল ২৫ জন পড়ুয়ার। এছাড়াও এইট প্লাস লেভেলের (ছ’ মাসের কোর্স) যে পরীক্ষা হওয়ার কথা, সেই পরীক্ষাতেও বসতে পারেননি প্রায় ৪৫ জন পড়ুয়া। অর্থাৎ, মোট ১০০ জন পড়ুয়া পরীক্ষায় বসতে পারেননি। এ নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলে মোট ৪৪ জন পড়ুয়া ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সোমবার মামলার শুনানি হলে বিষয়টি নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। আজ বুধবার ফের মামলার শুনানি রয়েছে।
মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী কিরণ শেখ বলেন, ‘মামলাকারী পড়ুয়ারা পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। কিন্তু তাদের কেউ ফর্ম ফিল আপ করতে পারেননি। পড়ুয়ারা এনিয়ে বারংবার প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে অনুনয় বিনয় করেছেন। বারে বারেই তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবেদনে সাড়া দেননি অধ্যক্ষ। ফর্ম ফিল আপ না হওয়ায় তাঁরা ট্যাবের টাকাও পাননি।’ সূত্রের খবর, অভিজিৎ কুণ্ডু পুরুলিয়া আইটিআই-এর অধ্যক্ষ। গত বছর জুন মাসে তিনি ঝালদার আইটিআই-এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন পড়ুয়ারা। মামলাকারী পড়ুয়াদের অন্যতম অশোক মাহাত, প্রশান্ত মাহাত, সত্য মাহাত বলেন, অধ্যক্ষ যদি আমাদের প্রতি একটু দয়ালু হতেন, তাহলে আমাদের বছরটা এভাবে নষ্ট হতো না। আদালতের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
অধ্যক্ষ অভিজিৎ কুণ্ডু বর্তমানকে বলেন, ‘এই ব্যাপারটা বিচারাধীন রয়েছে। তাই আমার কিছু বলা সাজে না। যা জানানোর আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ কলেজ সূত্রের খবর, দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিক অসঙ্গতি নজরে আসে ওই অধ্যক্ষের। তিনি দেখেন, পড়ুয়ারা ক্লাসে আসেনই না। যে সমস্ত পার্ট টাইম শিক্ষক রয়েছেন, তাঁরা ক্লাস না করিয়েই মাইনে তুলছেন। অধ্যক্ষ আসার পর ভোকেশনালের সাতজন পার্ট টাইম শিক্ষকের বেতনও বন্ধ করেন দেন। সেইসঙ্গে যেসব পড়ুয়ার ক্লাসে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি নেই, তাঁদের ফর্ম ফিল আপও তিনি করতে দেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অধ্যক্ষের যুক্তি ছিল, কোনও পড়ুয়ারই ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি নেই। শুধু তাই নয়, অনেক পড়ুয়াই আবার একবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ফের নতুন করে ভোকেশনালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কাউন্সিলের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন তাঁরা।
যদিও কলেজের অস্থায়ী শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ মাহাত, মনোরঞ্জন মাহাত বলেন, পড়ুয়াদের ৭৫ শতাংশই উপস্থিতি রয়েছে। অ্যাটেনডেন্সের খাতাও আমাদের কাছে রয়েছে। তা আমরা কোর্টে জমা দেব। প্রশ্ন উঠছে, অ্যাটেনডেন্সের যে খাতা রয়েছে, তাতে কি সই রয়েছে অধ্যক্ষের? অধ্যক্ষের দাবি, তিনি ওই খাতা বারংবার চাইলেও তা তাঁকে দেওয়া হয়নি। শিক্ষকদের দাবি, অধ্যক্ষ তো দুটো কলেজের দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত আটমাসে তিনি কলেজে আটবার এসেছেন কি না সন্দেহ! আপাতত মামলার জল কোনদিকে গড়ায়, সেদিকেই তাকিয়ে প্রত্যেকে।