• কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছে নতুন প্রজাতির গাঁদাফুল
    বর্তমান | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, কল্যাণী: মার্ভেল কমিক্সের রিক জোন্সকে মনে পড়ে? যাঁকে বাঁচাতে গিয়েই ব্রুস ব্যানার মানব থেকে অতিমানব ‘হাল্ক’ হয়ে গিয়েছিল। গামা রেডিয়েশন দিয়ে এবার নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে বাস্তবের ‘হাল্ক’-কে জন্ম দিতে চলেছে রাজ্য সরকারের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়! তফাৎ বলতে, বিসিকেভি-র ‘হাল্ক’ আসলে গাঁদাফুল। পরীক্ষাগারে সৃষ্ট এমন এক প্রজাতি, যার আয়তন সাধারণ গাঁদার মতোই। কিন্তু আসল সাফল্য, গামা রেডিয়েশনের মাধ্যমে তৈরি হতে চলা এই নতুন প্রজাতিতে রয়েছে ভরপুর লিউটিন। যা দিয়ে তৈরি হয় চোখের ওষুধ। অর্থাৎ উপকারী উপাদানের পরিমাণে অনেকটাই বেশি। ফলে চোখের চিকিৎসার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একাধিক ওষুধ তৈরিতে লিউটিনের ব্যাপক চাহিদা অনেকটাই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।


    গাঁদাফুলের থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক উপাদান লিউটিনের চোখের চিকিৎসায় ছাড়াও আরও একাধিক ব্যবহার রয়েছে। ফলে গাঁদাফুলের চাহিদা কেবলমাত্র পুজোর জন্যই নয়, বৈজ্ঞানিক কারণেও রয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ‘শিরাকল’ প্রজাতির গাঁদা। তার থেকেও মেলে প্রয়োজনীয় লিউটিন। কিন্তু লিউটিন উৎপাদন বেশি হবে এমন নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করতে দীর্ঘদিন ধরেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলছে কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বার্ক-এর (ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টার)অর্থানূকুল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিস্যুকালচার এবং ফ্লোরিকালচার বিভাগ কাজটি করছে। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য, এমন একটি প্রজাতির জন্ম দেওয়া যাতে ফুলের মধ্যে থাকা লিউটিনের পরিমাণ বেশি হবে। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, অবশেষে কাঙ্খিত সাফল্য আসতে চলেছে গবেষকদের ঝুলিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ রিসার্চ ইউনিট বিল্ডিংয়ের গামা রেডিয়েশন চেম্বারে বানিয়ে ফেলা হচ্ছে গাঁদাফুলের দুনিয়ার হাল্ককে। স্বাভাবিক শিরাকলের প্রায় সমান আয়তনের এই গাঁদাফুলেই মিলবে ভরপুর লিউটিন। যা চক্ষু চিকিৎসা ও বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 


    কীভাবে তৈরি হল এই বিশেষ প্রজাতির গাঁদা? জেনেটিক্স, টিস্যুকালচার, ফ্লোরিকালচারের মতো একাধিক বিভাগ নিয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্রপ রিসার্চ ইউনিট’ সূত্রের খবর, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত গাঁদাফুলের প্রজাতিটি ‘শিরাকল’। তাঁদের গবেষণায় এই প্রজাতির গাঁদাফুলকেই ‘৫০০ গ্রে’ গামা রেডিয়েশনে ফেলে জন্ম দেওয়া হচ্ছে নতুন প্রজাতির এই গাঁদাকে। এখনও পাকাপোক্ত কোনও নাম না দেওয়া হলেও প্রাথমিকভাবে এই প্রজাতিকে বলা হচ্ছে ‘শিরাকল মিউটেন্ট’। ইউনিটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রজাতির গাঁদাফুল চাষ করে চাষিরা অধিক মুনাফা করতে পারবেন। তাছাড়া সহজে নষ্ট হয় না এই ফুল। যদিও এর চেয়েও বড় দু’টি গুণগত বৈশিষ্ট রয়েছে এই ‘শিরাকল মিউট্যান্ট’-এর। সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টের এক বিজ্ঞানীর কথায়, চোখের রোগ চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল লিউটিন। যেহেতু আমরা গামা রেডিয়েশনের মাধ্যমে ফুলের গুণগত মান অনেক বাড়িয়ে ফেলতে পারছি তাই ভরপুর লিউটিন থাকছে তার মধ্যে। শুধু তাই নয়, সাধারণ প্রজাতির গাঁদা বাড়িতে ব্যবহারের পর বাসি হয়ে গেলে তার থেকে আর লিউটিন বার করা যায় না। কিন্তু আমাদের শিরাকল মিউট্যান্ট থেকে ওই অবস্থাতেও লিউটিন আলাদা করা সম্ভব হবে। 


    গবেষণা প্রসঙ্গে ভিসিকেভি-র উপাচার্য অশোককুমার পাত্র বলেন, আমাদের ক্রপ রিসার্চ ইউনিট অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। একাধিক গবেষণামূলক সাফল্য পেয়েছি। নতুন যে শিরাকল মিউটেন্ট গামা রেডিয়েশনের ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পথে, তারও জাতীয় স্তরে ট্রায়াল হওয়ার কথা। দেশের প্রায় ২৩টি জায়গায় সেই ট্রায়ালের পর কেন্দ্রীয়ভাবে ছাড়পত্র মিলবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)