নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: সরকারি নানা দপ্তরের আধিকারিক সেজে ফোন করে গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়ে প্রতারণার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি হীড়বাঁধের এক স্কুলশিক্ষক এমন প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ১০ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা খুইয়েছেন। তবে এবার উপস্থিত বুদ্ধির জেরে প্রতারণা থেকে বাঁচলেন বাঁকুড়া শহরের এক ব্যবসায়ী। তিনি সন্দেহজনক ফোন পেয়েই সটান বাঁকুড়া সাইবার ক্রাইম থানায় হাজির হন। পুলিস ওই ব্যবসায়ীর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছে।
বাঁকুড়ার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, বিভিন্ন দপ্তরের নাম করে প্রতারকরা ভয় দেখাচ্ছে। কখনও হোয়াটস্অ্যাপে আদালতের ভুয়ো পরোয়ানা পাঠিয়ে ‘ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট’ বলে টাকা আত্মসাৎ করছে। এরকম ঘটনা ঘটলে ১৯৩০ টোল ফ্রি নম্বরে তাড়াতাড়ি অভিযোগ জানাতে হবে। সেইসঙ্গে cybercrime.gov.in ওয়েবসাইটেও লিখিত অভিযোগ জানানো যেতে পারে। ‘সঞ্চার সাথী’ পোর্টালেও সন্দেহজনক মোবাইল নম্বর ‘রিপোর্ট’ করে দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে প্রতারকরা ওই নম্বর ব্যবহার করে অন্য কাউকে ঠকাতে পারবে না। সেই তথ্য ব্যাঙ্ক সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে চলে যাবে।
এসপি জানান, বাঁকুড়ায় এক শিক্ষক সম্প্রতি এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খুইয়েছেন। তবে এক ব্যবসায়ী তাড়াতাড়ি পুলিসের দ্বারস্থ হয়ে প্রতারণার হাত থেকে বেঁচেছেন। কারও টাকা গেলে তাড়াতাড়ি পুলিসের কাছে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। কারণ, দেরি হয়ে গেলে প্রতারকরা ওই টাকা নানাভাবে খরচ করে ফেলে। ফলে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা গেলেও খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
পুলিস জানিয়েছে, ওই স্কুলশিক্ষকের কাছে কিছুদিন আগে শুল্ক দপ্তরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে হিন্দিভাষী এক ব্যক্তি ফোন করে। তাঁকে বলা হয়, মুম্বই বন্দরে আটক হওয়া এক যুবকের কাছ থেকে ওই শিক্ষকের আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। সেই যুবক নাকি পার্সেলে মাদক পাচার করছিল। অবিলম্বে টাকা না পাঠালে শিক্ষককে গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ভয় পেয়ে ওই শিক্ষক পাঁচ দফায় ১০ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। পরে প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে প্রথমে হীড়বাঁধ থানা ও পরে বাঁকুড়া সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সাইবার ক্রাইম থানার এক আধিকারিক বলেন, এরকম ভুল বাঁকুড়া শহরের ওই ব্যবসায়ী করেননি। তিনি প্রতারকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতেই আমাদের কাছে আসেন। আমরা তাঁর কাছ থেকে ফোন নিয়ে কথা বলি। প্রতারক অনর্গল হিন্দি ও ইংরেজিতে কথা বলছিল। তবে পুলিস পরিচয় পেয়েই ফোন কেটে দেয়। প্রতারকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হোয়াটস্অ্যাপ কলে কথা বলে। এর পেছনে যে বড় চক্র আছে, তার সদস্যদের খোঁজ চলছে।