• মধ্যমগ্রাম কাণ্ড: পিসিশাশুড়ির রক্তমাখা জামাকাপড় ব্যাগে করে ফেলা হয় খালে,  উদ্ধার বঁটি ও হাতুড়ি, তাজ্জব পড়শিরা
    বর্তমান | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লির লালবাড়িতে খুনের ঘটনা হার মানাচ্ছে থ্রিলারকেও। মা ও মেয়ের কীর্তি যত প্রকাশ্যে আসছে, ততই আঁতকে উঠছেন পড়শিরা। খুনের ‘ক্রাইম সিন’ অবাক হয়ে শুনছেন তাঁরা। প্রমাণ লোপাটের জন্য অভিযুক্তরা কী না করেছে, সবই ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে। জেরায় পুলিসের কাছে মুখ খুলতে চাইছে না মা আরতি ঘোষ। তবে, কিছুটা ‘আক্ষেপ’ করছে মেয়ে ফাল্গুনী। মঙ্গলবার খুনে ব্যবহৃত বঁটি, দা ও হাতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিস। পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষকে খুন করার পরের দিন সোমবার নিহতের রক্তমাখা জামাকাপড় একটি ব্যাগে ভরে ফাল্গুনী ও তার মা আরতি ফেলে আসে নোয়াই খালে। এদিন তা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিস। তবে সবটাই ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই ব্যাগ দক্ষিণ বীরেশপল্লির বাড়িতেই আছে। ব্যাগ কোথায় রয়েছে, তার হদিশ পেতে মা ও মেয়েকে জেরার পর তাদের নিয়ে ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে চাইছেন পুলিসকর্তারা।


    মধ্যমগ্রামের খুন কাণ্ডের তদন্তভার মধ্যমগ্রাম থানার হাতে। এজন্য ফাল্গুনী ও আরতি ঘোষকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিস। জেরায় আরতি পুলিসকে জানিয়েছিল, বাড়ির সামনে যে রাস্তা রয়েছে, তার উল্টোদিকের পুকুরে বঁটি রয়েছে। বয়ান অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তদন্তকারীরা দু’জনকে নিয়ে এসে হাজির হন ঘটনাস্থলে। হাজির ছিলেন বারাসত পুলিস জেলার অতিরিক্ত সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গী। প্রথমে কাঠের বাট লাগানো বঁটি উদ্ধার হয়। কিছুক্ষণ বাদে একটি দা ও হাতুড়ি উদ্ধার করেন রাজ্য পুলিসের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। যদিও বঁটি শনাক্ত করলেও আরতি পুলিসকে জানিয়েছে, দা ও হাতুড়ি সে ফেলেনি।


    উল্লেখ্য, সম্পত্তি নিয়ে অশান্তির জেরে বউমা ফাল্গুনী গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, রবিবার ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করে পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষকে। মাথায় আঘাতের জন্য নিহতের দেহ থেকে কোন রক্তপাত হয়নি। মৃতদেহ ঘরেই ছিল। দেহ আগলে ছিল মা ও মেয়ে। পুলিস জেরায় জানতে পেরেছে, প্রথমে বাড়িতে থাকা একটি বড় ব্যাগে দেহটি ঢোকানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি তারা। পরে কলকাতা থেকে বড় ব্যাগ কিনে আনে। আয়ার কাজে অভিজ্ঞতা থাকায় আরতি জানত, মৃত্যুর কত ঘণ্টা পর দেহে পচন শুরু হয়। ব্যাগে দেহ না ঢোকায় সুমিতার দুটি গোড়ালি কেটেছিল সে। কীভাবে হয় এই কাজ? উত্তরে আরতি জানিয়েছে, প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে গোড়ালির হাড় ভাঙা হয়। পরে কাটা হয় সুমিতার গোড়ালি। তদন্তকারীদের কথায়, খুন করলেও কোনও আক্ষেপ নেই আরতির। তার চোখেমুখে এখনও অপরাধবোধ কাজ করছে। খুন করে এত ‘স্মার্ট’ থাকা কঠিন! জেরায় মনে হচ্ছে, সে যেন পেশাদার কিলার। এ প্রসঙ্গে বারাসত পুলিস জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, আরতি হাতুড়ি দিয়ে গোড়ালির হাড় ভেঙে ব্যাগে ঢোকায়। দ্বিতীয় ব্যাগে নিহতের পোশাক নিয়ে নোয়াই খালে ফেলে আসে তারা। ব্যাগ খুলে রক্তমাখা কাপড় খালের জলে ফেললেও ব্যাগটি ফেলেনি। ধৃতদের জেরা করে ঘটনা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)