নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আইনি সহায়তা নয়, বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডই চাইছেন ট্যাংরা কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত প্রসূন দে। গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার প্রথমবার শিয়ালদহ আদালতে আনা হয় তাঁকে। সেখানে এসিজেএম অরিজিৎ মণ্ডলের এজলাসে শুনানির শুরুতেই লিগ্যাল এইডের আইনজীবী বলেন, ‘উনি আইনজীবী রাখতে চাইছেন না। ওকালতনামায় সই করছেন না। বলছেন, চার্জশিট হলেই আইনের হাত ধরে মৃত্যুর রাস্তা বেছে নিতে চান।’ প্রসূন কাঠগড়ায় উঠলে বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আইনজীবী রাখবেন?’ দে পরিবারের ছোট ছেলে ঘাড় নেড়ে না বলেন। বিচারক বলেন, ‘কোনও টাকা লাগবে না। তাও রাখবেন না?’ প্রসূন তখনও ঘাড় নাড়েন। এরপর আদালত জানতে চায়, তাঁর কিছু বলার আছে কি না। অভিযুক্ত একই ভঙ্গিমায় না জানান। এরপর বিচারক বলেন, ‘আপনাকে ওরা (পুলিস) হেফাজতে চাইছে। পুলিস কাস্টডি মানে বোঝেন তো? আপনাকে ওরা জেলে পাঠাবে না। পুলিসের কাছেই থাকতে হবে।’ তারপরও প্রসূন জানিয়ে দেন, তাঁর কিছু বলার নেই।
তিনটি খুনের পর মৃত্যুকেই বেছে নিতে চেয়েছিলেন প্রণয় ও প্রসূন দে। এখনও সেই লক্ষ্যেই অবিচল ছোটভাই। হেফাজতে নিয়ে প্রসূনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তকারীরা জেনেছেন, পায়েস রান্না করেন স্ত্রী রোমি। দাদা প্রণয় ও বউদি সুদেষ্ণা বিষয়টি জানতেন। এরপর রোমি সেটি নিয়ে আসেন ঠাকুরঘরে। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন প্রণয়। ঠাকুরের সামনেই পায়েসে ঘুমের ওষুধ মেশান বড়ভাই। হাতজোড় করে ঠাকুরের উদ্দেশে বলেন, ক্ষমা করে দাও। তোমার সামনে পাপ কাজ করছি। মেয়ে প্রিয়ংবদা ও ভাইপোকে বলা হয়, ঠাকুরের কাছে পায়েস দেওয়ার কারণ, যাতে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। পুলিস জেনেছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই পায়েস খেয়ে তাঁরা সকলে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর পাঁচটায় ঘুম ভাঙার পর প্রসূন দেখেন, মেয়ে প্রিয়ংবদা ছাড়া প্রত্যেকেরই জ্ঞান আছে। এরপরই নাকি রোমি মেয়ের পা চেপে ধরে। আর প্রসূন মুখে বালিশ চাপা দিয়ে প্রিয়ংবদার মৃত্যু নিশ্চিত করে। কারণ হিসেবে সে পুলিসকে জানিয়েছে, আমরা মরে গেলে ওকে দেখবে কে? তারপর প্ল্যান বি হিসেবে ঠিক হয়, হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করবেন সকলে। রোমি শিরা কাটতে না পারায় কেটে দিই। স্ত্রীর চিৎকার শুনে বউদি ঘরে ঢোকেন। চিৎকার থামাতে রোমির মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শিরা কাটি। তারপর বউদির। প্রসূনের দাবি, এরপর তিনি ফের ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে দেয়নি। কিন্তু ভাইপো? প্রসূন জানিয়েছেন, সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আত্মহত্যার পথই বেছে নিয়েছিলাম। ভাইপো সবসময় পিছনের সিটে বসত। অ্যাক্সিডেন্টে ওর মৃত্যু যাতে নিশ্চিত হয়, তাই সেদিন সামনের আসনে বসিয়েছিলাম।