এই সময়: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবারের গোলমালের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের এজলাসে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হতে পারে। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকেও একই দাবি তুলল সেখানকার বেশ কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। সেই বৈঠকে জুটা, আবুটা, ওয়েবকুপা এবং ওয়েবকুটার প্রতিনিধিরা ছিলেন। এ ছাড়াও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আধিকারিকরা। সেখানেই জুটা, আবুটার মতো একাধিক সংগঠনের তরফে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘সে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ঘটনাবলি নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে একমাত্র পথ আধা বা পূর্ণাঙ্গ বিচারবিভাগীয় তদন্ত। এ ছাড়া প্রকৃত সত্য সামনে আসবে না।’ আবুটার সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতির কথায়, ‘১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর যা হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ক্যাম্পাসে আগুন লাগানো, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি, মন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুর ও তাঁর গাড়ির ধাক্কায় পড়ুয়ার জখমের ঘটনায় অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা উচিত।’
তিনিও নিরপেক্ষতার স্বার্থে পুলিশ বা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। যদিও উপাচার্য বিচারবিভাগীয় তদন্তে অসুবিধার কথাই জানান। তিনি বলেন, ‘আগে একবার গবেষণা সংক্রান্ত মূল্যায়ন নিয়ে অভিযোগ ওঠায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি মাঝপথেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।’ অসুস্থতার কারণে এ দিন উপাচার্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, ‘অবিলম্বে ক্যাম্পাসে শান্তি ফেরাতে হবে। সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ওঠে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিও, ঠিক যে দাবিতে শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন এসএফআই ও এআইডিএসও সমর্থকরা। সে দিন শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত দাবি করেছে ওয়েবকুপা। একইসঙ্গে নিরাপত্তার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষীরও আবেদন জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সব রকম পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে মঙ্গলবারের বৈঠকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, ‘সব স্টেক হোল্ডারকে নিয়ে আমাদের বৈঠক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ছাত্রছাত্রীদের কী ভাবে ক্লাসমুখী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘প্রস্তাব এসেছে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্রুত কথা বলার। এই বৈঠকে ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে, এ দিনের বৈঠক নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে যাদবপুরের এসএফআই। তাদের প্রশ্ন, উপাচার্য কেন ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছেন না? এসএফআই নেতা শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘উপাচার্য যদি অনলাইনে অন্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন, তা হলে কেন ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছেন না? আমরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চাই। উনি যদি আমাদের সঙ্গে কথা না–বলেন, তা হলে আমরা অরবিন্দ ভবন বন্ধ করে অবস্থান-বিক্ষোভে বসতে বাধ্য হব।’ এ বিষয়ে জেনারেল বডি (জিবি) বৈঠকের পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান শুভদীপ।