• কিশোরী মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন বাবার, পা চেপে ধরেছিলেন মা
    এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: সাদার উপর খয়েরি চেকের জামা। মুখে সার্জিকাল মাস্ক। ট্যাংরায় দে পরিবারের তিন নারী সদস্যের সবাইকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত বাড়ির ছোট ছেলে প্রসূন দে মঙ্গলবার শিয়ালদহ আদালতে দাঁড়িয়ে বিচারককে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জানিয়ে দিলেন, তাঁর কোনও আইনজীবীর প্রয়োজন নেই, তাঁর কিছু বলারও নেই। সোমবার প্রসূনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় প্রসূন জানিয়েছেন যে, তাঁর ১৪ বছরের মেয়ে প্রিয়ংবদাকে নাক–মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে তিনি খুন করেন এবং সেই সময়ে মেয়ের পা চেপে ধরেছিলেন প্রসূনের স্ত্রী রোমি।

    পুলিশ জানিয়েছে, প্রসূনের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রিয়ংবদা মারা যাওয়ার পর রোমি ঘরে গিয়ে নিজের হাতের শিরা কাটেন। কিন্তু সেটা ঠিক ভাবে কাটা হয়নি। তখন প্রসূন গলা ও হাতের শিরা কেটে এবং মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন স্ত্রীকেও। তার পর রোমি সত্যিই মারা গিয়েছেন কি না, সেটা দেখতে তাঁর ঘরে যান প্রসূনের বৌদি সুদেষ্ণা। পুলিশের বক্তব্য, প্রসূন দাবি করেছেন, সুদেষ্ণা নিজের ঘরে গিয়ে প্রসূনকে রোমির মতো তাঁকেও খুন করতে বলেন। সুদেষ্ণা জানান, তিনি নিজে মরতে পারছেন না। সে জন্য বৌদিকেও একই ভাবে— গলা ও হাত কেটে এবং মুখে বালিশ চাপা দিয়ে প্রসূন খুন করেন। তার পর তিনতলার একটি ঘরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সেটা ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালের কথা। তিন জনকে যখন প্রসূন বাড়ির দোতলায় খুন করছেন, সেই সময়ে বড় ভাই প্রণয় দে তাঁর ছেলে প্রতীপকে নিয়ে ছিলেন বাড়ির তিনতলায়।

    পুলিশ সূত্রের খবর, প্রসূন দে–র বয়ান থেকে এখন একটা ব্যাপার স্পষ্ট হচ্ছে যে, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ঘুমের কড়া ডোজ়ের ওষুধ মেশানো পায়েস বাড়ির ছ’জন খেলেও তাতে চার প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য মৃত্যু হওয়া দূর, পর দিন সকালে তাঁদের প্রত্যেকের দিব্যি ঘুম ভেঙে যায়। এমনকী, নাবালক প্রতীপও জেগে যান। কেবল প্রিয়ংবদা আচ্ছন্ন অবস্থায় নিজের ঘরে শুয়েছিল। সেই অবস্থাতেই তার মা–বাবা তাকে খুন করেন। প্রসূন জানিয়েছেন, ১৮ তারিখ সকালে প্রথমে তাঁর ঘুম ভাঙে। তার পর ঘুম থেকে ওঠেন প্রসূনের স্ত্রী রোমি। তার পর তাঁরা দু’জনে মিলে প্রসূনের দাদা প্রণয়কে ডাকেন। তখন ঘুম থেকে ওঠেন প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণাও। ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা চার জনে ঠিক করেন যে, আত্মঘাতী হওয়ার জন্য তাঁরা একে অন্যকে সাহায্য করবেন।

    তদন্তকারীদের বক্তব্য, প্রসূন জানিয়েছেন, ১৮ তারিখ রাতে প্রথম দিকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে–সহ বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরেও দুর্ঘটনার সুযোগ তাঁরা পাননি। তাঁদের এটাও মনে হয় যে, কোনও ট্রাকে ধাক্কা মারলে ট্রাক চালক বিনা কারণে মারা যেতে পারেন। তখন প্রসূনই জানান, অভিষিক্তি মোড়ের কাছে মেট্রো রেলের পিলার রয়েছে, সেখানে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো যেতে পারে।

    পুলিশ জানিয়েছে, প্রণয় দে–কে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে। প্রতীপ চেয়েছিল, তার দাদু–দিদা অর্থাৎ কাকার শ্বশুর–শাশুড়ির কাছে থাকতে। কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতীপকে তাঁরা রাখতে চান না। ফলে প্রতীপকে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করছে কলকাতা পুলিশ।

    এ দিন দুপুর ৩টে নাগাদ শিয়ালদহ আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অরিজিৎ মণ্ডলের এজলাসে হাজির করানো হয় প্রসূন দে–কে। শুনানিতে লিগাল এইড সার্ভিসেস নিযুক্ত আইনজীবী কবিতা সরকার বলেন, ‘চার্জশিটের পর নিজের দোষ স্বীকার করে শাস্তি পেতে রাজি প্রসূন দে।’ বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশি হেফাজতে থাকতে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেন প্রসূন। বিচারক তাঁকে ৬ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

  • Link to this news (এই সময়)