• আচমকা শ্বাসনালিতে মটরশুঁটি, কলকাতার চিকিৎসকদের তৎপরতায় প্রাণরক্ষা ১১ মাসের খুদের
    প্রতিদিন | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • অভিরূপ দাস: তেলেঙ্গানা বাঁচাতে পারেনি। বাংলা পারল। সম্প্রতি তেলেঙ্গানার এক স্কুলে টিফিন খেতে গিয়ে ক্লাসরুমেই শ্বাসনালিতে লুচি আটকে মারা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির খুদে। কার্যত একই ঘটনা বাংলায়। তবে বাংলার চিকিৎসকদের তৎপরতায় থমকে গিয়েছে মৃত্যুদূত। ১১ মাসের খুদেকে নতুন জীবন দিয়েছেন এসএসকেএমের চিকিৎসকরা।

    দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দা বছর দেড়েকের এক খুদে বাড়িতে মটরশুঁটি খাচ্ছিল। আচমকা অঘটন। শ্বাসনালিতে ঢুকে যায় মটরশুঁটি। এক বছর ১১ মাসের অনিলাভকে নিয়ে এসএসকেএমে আসেন তার মা-বাবা। দেড় বছরের শিশুর ঠোঁটে নীল আভা। চিকিৎসা পরিভাষায় যা সায়ানোসিস। এসএসকেএম হাসপাতালের কান-নাক-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মৈনাক মৈত্রর কথায়, বাচ্চাটিকে দেখেই বুঝতে পারি নিশ্বাস নিতে ব্যাপক কষ্ট হচ্ছে। একরত্তির ফুসফুসে কিছু আটকে আছে। অবস্থা এতটাই শোচনীয়, এক্স রে করার টাইম ছিল না। ‘ক্লিনিকাল এক্সপেরিয়েন্স’ কাজে লাগিয়ে চিকিৎসক মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, “দ্রুত বলুন কী করে হল।” খুদের মা-বাবা জানায় বাড়িতে মটরশুঁটি খাচ্ছিল সে। চিকিৎসক বুঝতে পারেন, আচমকা তা চলে গিয়েছে শ্বাসনালিতে। রিজিড ব্রঙ্কোস্কোপির জোগাড়যন্ত্র শুরু করে দেন চিকিৎসক। রিজিড ব্রঙ্কোস্কোপিতে অজ্ঞান করে মুখের ভিতর দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে তা ফুসফুসে পৌঁছতে হয়।

    শুরু হয় অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মিনিট পনেরো এদিক ওদিক হলেই বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। খাবার খাওয়ার সময় অন্যমনস্ক হওয়া অনুচিত। বারবার সাবধান করেন চিকিৎসকরা। এসএসকেএম হাসপাতালের কান-নাক-গলা বিভাগের চিকিৎসক ডা. মৈনাক মৈত্র
    জানিয়েছেন, খাবার খাওয়ার সময় খুদের সামনে মোবাইল চালিয়ে দেন অভিভাবকরা। কখনও টিভি চালিয়ে দেন। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। শিশুরা মোবাইলের দিকে মন দিতে গিয়ে ভালো করে চিবোয় না। এতে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেমনটা হল দেড় বছরের অনিলাভর। বড় কেউ হলে এতটা মারাত্মক হয় না। এক্ষেত্রে মটরশুঁটিটা প্রায় শ্বাসনালি বন্ধ করে দিয়েছিল। ডা. মৈনাক মৈত্র জানিয়েছেন, “শ্বাস নেওয়া আর ঢোক গেলার মধ্যে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা হয় না। সেক্ষেত্রে বাচ্চা যখন কিছু মুখে দিচ্ছে তখন অনেক বেশি সচেতন থাকা উচিত।” ১ থেকে পাঁচ বছর, এই বয়সটা খুব সাবধান থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে গুলি, ছোলা, শোলার বল জাতীয় জিনিস শিশুর হাতের সামনে না রাখাই উচিত।
  • Link to this news (প্রতিদিন)