এই সময়: ফেব্রুয়ারিতে দু’দফায় মোট আট দিন পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ রাখার পরে মার্চে আরও দু’দিন বন্ধ থাকবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা মেট্রোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মার্চের ৮ ও ৯ তারিখ বন্ধ রাখা হবে গ্রিন লাইন। নতুন বসানো সিগন্যাল ব্যবস্থা পরীক্ষার জন্যেই এমন পরিকল্পনা। পরীক্ষা–পর্ব নির্বিঘ্নে মিটে যাওয়ার পরেই কি কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির (সিআরএস) প্রতিনিধিরা গ্রিন লাইন পরিদর্শনে আসবেন? তাঁদের অনুমোদন পেলেই কি আধ ঘণ্টায় মেট্রো চেপে হাওড়া ময়দান থেকে পৌঁছে যাওয়া যাবে সল্টলেক সেক্টর–ফাইভ? আশায় বুক বাঁধছেন অনেকেই।
গ্রিন লাইনে আপাতত খণ্ডিত পরিষেবা চলছে। হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড এবং শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক সেক্টর-ফাইভ এই দুই অংশে আলাদা করে ট্রেন চালানো হচ্ছে। এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহকে জুড়তে কলকাতা মেট্রোর গ্রিন লাইনের সিগন্যাল ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আবশ্যিক। তার জন্যই ৪৫ দিন গ্রিন লাইনে পরিষেবা বন্ধ রাখার পরিকল্পনা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তার চেয়ে অনেক কম দিনেই কাজ শেষ করেছেন প্রযুক্তিবিদরা।
ফেব্রুয়ারির ১৩ থেকে ১৬ এবং ২০ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত দু’দফায় মোট আট দিন ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর পরিষেবা বন্ধ রেখে নতুন সিগন্যাল ব্যবস্থা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু কাজের জন্য মার্চেও দু’দিন পরিষেবা বন্ধ থাকবে এই লাইনে। কলকাতা মেট্রোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান রুটে শুক্রবার সন্ধে সাতটায় শেষ মেট্রো ছাড়বে। একই ভাবে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সেক্টর ফাইভ রুটে সন্ধে সাতটা তিন মিনিটে শেষ মেট্রো ছাড়বে। প্রায় ৬০ ঘণ্টা পরে সোমবার সকাল থেকে ফের স্বাভাবিক হবে পরিষেবা।
ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর–ফাইভ পর্যন্ত ১৬.৬ কিলোমিটার জুড়েই সদ্য বসানো কমিউনিকেশন বেসড ট্রেন কন্ট্রোল (সিবিটিসি) ঠিক মতো কাজ করছে কি না তার পরীক্ষা চলছে। একই সঙ্গে চলছে শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত প্রায় ২.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে মেট্রোর রেক চললে সুড়ঙ্গে, বিশেষ করে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গে কোনও সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি না সেটাও খুঁটিয়ে দেখা।
ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর দৈর্ঘ্য ১৬.৬ কিমি হলেও শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ২.৬ কিমি অংশ নিয়েই এই গ্রিন লাইনের যাবতীয় দুশ্চিন্তা। ২০১৯ থেকে ২০২৩–এর মধ্যে এই লাইনের যে অংশটি বউবাজারের নীচ দিয়ে গিয়েছে, সেই অংশের দুর্গা পিতুরি লেন, স্যাকরাপাড়া লেন এবং গৌর দে লেনের ভূগর্ভে পূর্বমুখী টানেলে অন্তত চারবার ধস নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত এই অংশ দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ওই টানেল তৈরি করা গিয়েছে। টানেলের মধ্যে দিয়ে ট্রেনও চলেছে। সম্প্রতি ওই টানেলের মধ্যে সিবিটিসি ব্যবস্থা বসানোও হয়েছে। নিয়মিত ওই অংশে রেক চালিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষাও চলছে।
কলকাতা মেট্রোর ইঞ্জিনিয়াররা সেই পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হলে গ্রিন লাইন পরিদর্শনের আমন্ত্রণ যাবে সিআরএস আধিকারিকদের কাছে। কলকাতা মেট্রো রেল সূত্রে খবর, মার্চেই হয়তো লাইন পরিদর্শনে আসতে পারেন সিআরএস কর্তারা। তাঁরা সবুজ সঙ্কেত দিলেই হাওড়া ময়দান থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মেট্রোর ট্রেন পৌঁছবে সল্টলেক সেক্টর–ফাইভে। কবে সেটা হবে, কোটি টাকার সেই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর অবশ্য দেননি মেট্রোর কর্তারা। তবে বাংলা নববর্ষে তেমন কিছু হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।