• বছরভর প্রবাহ গঙ্গাজলের, পুণ্যস্নানের সুযোগ আদিগঙ্গায়
    এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • একটা সময় ছিল, যখন আদিগঙ্গার জলে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যেতেন পুণ্যার্থীরা। স্নানের জন্য কালীঘাট মন্দিরের অদূরে, আদিগঙ্গার পাড়ে সুদৃশ্য ঘাট নির্মাণ করেছিলেন রানি রাসমণি। কিন্তু গত কয়েক দশক যাবৎ আদিগঙ্গার জলে দূষণের মাত্রা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, সেই নোংরা, কালচে এবং দুর্গন্ধ বেরোনো জলে স্নান করা তো দূর, পা ডোবাতেও ভয় পান মানুষ। আদিগঙ্গাকে অনেকে বলেন টালি নালা। এখন তার জলের অবস্থা সত্যিই নালা–নর্দমার মতো নোংরা। তবে দেরিতে হলেও আদিগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা। সে জন্য খিদিরপুরের দইঘাটের কাছে আদিগঙ্গা ও গঙ্গা যেখানে মিশছে, সেখানে তৈরি হবে নতুন ব্যারাজ। আদিগঙ্গার জল পরিষ্কার রাখতে গড়ে উঠবে নতুন সুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন। যা আদিগঙ্গার দূষিত জলকে শোধন করে ফের আদিগঙ্গায় ফেলবে।

    কলকাতা পুরসভার কর্তাদের দাবি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আদিগঙ্গা তার সেই পুরোনো চেহারায় ফিরে যাবে। আগের মতো আদিগঙ্গায় সারা বছর ধরে প্রবাহ হবে গঙ্গার জলের। চাইলে আদিগঙ্গায় স্নানও করতে পারবেন কালীঘাটের পুণ্যার্থীরা। তা ছাড়া, কেওড়াতলা শ্মশানে মৃত নিকটজনের দেহ দাহ করার পর গঙ্গাস্নানের জন্য আর ছ’কিলোমিটার দূরে বাবুঘাটে উজিয়ে যেতে হবে না। সেই সঙ্গে আদিগঙ্গার জলে দূষণ কমলে তার আশপাশের পরিবেশও পুরোপুরি পাল্টে যাবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কলকাতা পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের তরফে দিন কয়েক আগেই গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হয়েছে।

    কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিং জানাচ্ছেন, আদিগঙ্গার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে গঙ্গার। গঙ্গায় যখন জোয়ার আসে, তখন সেই জলে আদিগঙ্গা পরিপুষ্ট হয়। আবার ভাটার সময়ে সেই জল বেরিয়ে যায়। কারণ, সেখানে কোনও স্লুইস গেট নেই। ফলে, জোয়ারের সময় টুকু ছাড়া বাকি সময়ে আদিগঙ্গায় খুব বেশি জল থাকে না। তবে আদিগঙ্গার কিছু অংশে, বিশেষ করে কালীঘাট থেকে আলিপুর পর্যন্ত অংশে নাব্যতা বেশি হওয়ায় সেখানে জল জমে থাকে বেশি পরিমাণে। তখন সেটা বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়। জোয়ারের সময়ে জলের স্রোতে ভেসে আসা আবর্জনা জমা হয় আদিগঙ্গার বুকে। সেই সঙ্গে গঙ্গার দু’পাড়ে থাকা নিকাশি নালার জলও মিশছে আদিগঙ্গায়।

    এ সবের জন্যই আদিগঙ্গা দূষিত হচ্ছে। মেয়র পারিষদ তারক বলেন, ‘এই দূষণ থেকে আদিগঙ্গাকে মুক্তি দিতে দইঘাটের কাছে আদিগঙ্গা ও গঙ্গার সংযোগস্থলে একটি ব্যারাজ নির্মাণ করা হবে। যার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হবে আদিগঙ্গায় জলের প্রবাহকে। জোয়ারের সময়ে গঙ্গা থেকে আদিগঙ্গায় ঢোকা জল যাতে ভাটার সময়ে বেরিয়ে না–যায়, সে জন্য স্লুইস গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ মেয়র পারিষদের বক্তব্য, ‘আদিগঙ্গায় জলের প্রবাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি তাকে দূষণমুক্ত রাখতে একটি সুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন বানানো হবে। সেখানে আদিগঙ্গার দূষিত জলকে শোধন করার পর তা ফেলা হবে আদিগঙ্গাতেই।’

    কলকাতা পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিজি অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘দইঘাটে যেটা তৈরি হচ্ছে, সেটা একাধারে ব্যারাজ ও লকগেট, দু’টোরই কাজ করবে।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘জোয়ারের সময়ে আদিগঙ্গায় জল বেড়ে যায়। তাতে প্লাবিত হয় কালীঘাট ও আশপাশের কয়েকটি নিচু তল্লাট। পাম্পিং স্টেশন তৈরি হলে পাম্প করে আদিগঙ্গার ওই জলকে দ্রুত বার করে দেওয়া যাবে।’                        

    পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘আমার একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই এনজিটি (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল)–র নির্দেশে আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে শুধু ব্যারাজ তৈরি করে আদিগঙ্গার দূষণ কমবে না। টালিনালার দু’পাশে প্রায় ১০০টি নর্দমা রয়েছে। সেগুলো থেকে আদিগঙ্গায় জল ফেলা আগে আটকাতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)