• কিশোরীর এক ইশারায় বান্ধবীর ফোন পেয়ে বিয়ে আটকাল বিডিও
    এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, দাঁতন: সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তার মধ্যেই চুপিসারে পাত্র দেখা শুরু হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি ঘুণাক্ষরেও তা টের পায়নি। পরীক্ষা শেষ হতেই বাবা–মা তাকে বিয়ের খবর দেন। পাড়া–প্রতিবেশী তো দূরের কথা, বিয়ের খবর যাতে কেউই টের না–পায়, তাই অন্য জায়গায় রাতে বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন নাবালিকার বাবা। কিন্তু নাবালিকার এক ইশারাতেই ভেস্তে গেল বিয়ে। গাড়িতে ওঠার সময়ে পাড়ার এক বন্ধুকে নাবালিকা লুকিয়ে ইশারায় বিয়ের কথা বোঝায়। সেই বান্ধবীই বিডিও অফিসে ফোন করে জানিয়ে দেয় সব।

    খবর নিয়ে বিডিও জানতে পারেন, এক মন্দিরে বিয়ে হচ্ছে। সেখানে বর ও কনেপক্ষ পৌঁছনোর আগেই চলে যান বিডিও। গাড়ির আলো বন্ধ করে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে পৌঁছন পাত্রপক্ষের বাড়ির লোক। পৌঁছয় মেয়ে ও তার পরিবারও। পুরোহিত এসে বিয়ের মন্ত্র শুরু করতে যাবেন, ঠিক সেই সময়ে মন্দিরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়েন বিডিও। সঙ্গে পুলিশ বাহিনী। বিয়ে আটকানো হয় নাবালিকার। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন ২ ব্লকে।

    দাঁতন ২–এর বিডিও অভিরূপ ভট্টাচার্য জানান, মেয়ের বাড়ি বেলদা থানার সাবড়া গ্রামে। বাবা-মা চাষবাস ও মজুর খেটে সংসার চালান। তাঁদের পাঁচ মেয়ে। তার মধ্যে চার মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে বিয়ে না করে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু বাবা-মা পড়াতে রাজি ন‌ন মোটেই। তাঁদের ভয় পরে যদি পাত্র না মেলে! মিষ্টভাষী সুন্দরী মেয়ের সম্বন্ধ দেখা শুরু হয়। দাঁতনের তুরকা এলাকার বছর ত্রিশের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন মেয়ের বাড়ির লোক। অভিযোগ, তার সঙ্গে জোর করেই মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন বাবা–মা। বিয়ের খবর যাতে কেউ না জানতে পারে, তাই মেয়ের উপরে কড়া নজর রাখা হয়। এমনকী, মেয়ের বন্ধুদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বাবা–মা।

    মেয়ের নামে একটি নকল আধার কার্ডও বানানো হয় বলে অভিযোগ। যেখানে মেয়ের বয়স ১৮ বছর দেখানো হয়েছে। বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে দাঁতনের সাহানিয়া মন্দিরে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাড়িতে লুকিয়ে মেয়েকে সাজানো হয়। তারপরে গাড়ি করে মন্দিরে নিয়ে যায় পরিবার। এর মধ্যেই মেয়েটি বন্ধুকে ইশারায় বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করে। সেই বন্ধুই সোমবার বিডিও–কে ঘটনাটি জানায় ঘটনাটা। সব জেনে বিডিও তিনটি টিম তৈরি করেন। রাত ১১টা নাগাদ মন্দিরে পৌঁছন পুলিশ–প্রশাসনের কর্তারা। পাত্র ও কনেকে টোপর পরিয়ে মন্দিরে নিয়ে যেতেই পুলিশ গিয়ে ধরে। অল্প বয়সে বিয়ে হলে মেয়ের কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে বোঝান বিডিও। শেষমেশ বিয়ে বন্ধ হয়। মেয়ের বাবা–মাকে থা‌নায় নিয়ে এসে মুচলেকা লিখিয়ে ছাড়া হয়।

    বিডিও বলেন, ‘পাত্রর বয়স ৩০। বিষয়টি তাঁর অজানা বলে মনে হয় না। তাঁর বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব ভেবেছি। জেনে বুঝে কেন তিনি এই বিয়ে করছিলেন, পুরোহিতই বা কেন এমন করলেন, তারও তদন্ত হবে।’ সপ্তাহে দু’বার মেয়ের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেবে ব্লক প্রশাসন। বিডিও আরও বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পরে মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলো কি না, স্কুলে যাচ্ছে কি না, বিষয়টি আমাদের জানাতে বলেছি। প্রয়োজনে ওর কোনও অসুবিধে হলে আমরা সাহায্য করব।’ বিয়ে বন্ধ হওয়ায় খুশি নাবালিকা। পড়তে চাই বলে সে বিডিওকে জানিয়েছে।

    বাল্যবিবাহ নিয়ে চারদিকে জোর প্রচার চলছে। তার মাঝে সোমবার ডেবরা ব্লকে এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেন ডেবরার বিডিও প্রিয়ব্রত রাড়ি। এ বার তেমনই ঘটনা ঘটল দাঁত‌নেও।

  • Link to this news (এই সময়)