• পুরুলিয়ায় কৃত্রিম উপায়ে তৈরি হচ্ছে বিরল শ্বেতপলাশের চারা, রক্ষার উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়...
    আজকাল | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিরল প্রজাতির শ্বেতপলাশ গাছ রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ বনভূমিতে যেখানে লাল পলাশের রক্তিম সৌন্দর্য মুগ্ধ করে, সেখানে শ্বেতপলাশের মতো এক দুর্লভ প্রজাতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই গাছ ধর্মীয়, তন্ত্রসাধনা ও আয়ুর্বেদিক গুণের কারণে বহুদিন ধরেই মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তবে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এই গাছ বিলুপ্তির পথে, যা বন দপ্তর ও গবেষকদের চিন্তায় ফেলেছে।

    পুরুলিয়ার বন দপ্তরের সমীক্ষায় জানা গেছে, জেলার বাঘমুন্ডি, পুঞ্চা ও রাকাবের জঙ্গলে মাত্র ১৫টি শ্বেতপলাশ গাছ অবশিষ্ট রয়েছে। শ্বেতপলাশ গাছ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে নানা ভুল ধারণা। অনেকের বিশ্বাস, এই গাছের আঠা বন্ধ্যত্ব দূর করতে সক্ষম, আবার কেউ কেউ তন্ত্রসাধনার জন্য এর শিকড় ও ডাল ব্যবহার করেন। এসব কারণে গাছের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বন দপ্তর ও গবেষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কৃত্রিম উপায়ে শ্বেতপলাশের চারা তৈরি করে এর বংশবৃদ্ধি ঘটানো হবে।

    এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগের অধ্যাপক সুব্রত রাহার নেতৃত্বে শুরু হয়েছে টিস্যু কালচার ও অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে শ্বেতপলাশের চারা তৈরি। অধ্যাপক রাহা জানান, মাত্র একটি ডাল থেকেই শতাধিক চারা তৈরি করা সম্ভব এবং ছয় মাসের মধ্যেই নতুন চারা তৈরি হবে। বন দপ্তরের সহযোগিতায় এই চারা পুরুলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে রোপণ করা হবে।

    গবেষক সৌরভ গড়াই জানিয়েছেন, শ্বেতপলাশে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে ওষুধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে বন্ধ্যত্ব দূর করার প্রচলিত ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো মেলেনি। এ বিষয়ে গবেষণা চালানো হচ্ছে।

    পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, জেলার শ্বেতপলাশ গাছগুলির দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে এবং স্থানীয় মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন। পুঞ্চার রাজনওয়াগড় এলাকায় স্থানীয়রা শ্বেতপলাশ গাছ পাহারার দায়িত্ব নিয়েছেন।

    এই বিরল প্রজাতির গাছের সংরক্ষণ ও চারা তৈরির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে শ্বেতপলাশের বিস্তার ও সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
  • Link to this news (আজকাল)