তল্লাশিতে আপত্তি, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মারে মালদহে জখম ৬ শিক্ষক
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ মার্চ ২০২৫
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে উত্তেজনা ছড়াল মালদহের স্কুলে। বুধবার, ইংরেজি পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি চালানোকে ঘিরে রণক্ষেত্রের আকার ধারণ করল বৈষ্ণবনগর থানার চামগ্রাম হাইস্কুল। পরীক্ষার্থীদের হামলার জেরে জখম হয়েছেন স্কুলের ৬ জন শিক্ষক। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্কুলে আসে বৈষ্ণবনগর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। এরপর সেই স্কুলে পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। তিনি জানান, যা ঘটেছে তা একেবারেই অনভিপ্রেত। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম ঘটনা না ঘটে, তা নজরে রাখা হবে। একই সঙ্গে তিনি রিপোর্টও চেয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে।
মালদহের চামাগ্রাম হাই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন কান্দিটোলা হাই মাদ্রাসা, চর সুজাপুর হাই স্কুল এবং পারলালপুর হাই স্কুলের পরীক্ষার্থীরা। সংসদের নির্দেশ মতো এদিন ‘মেটাল ডিটেক্টর’ দিয়ে তল্লাশি করছিলেন কয়েক জন শিক্ষক। সেই সময়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক জন জানান, তল্লাশি চালানো যাবে না। পড়ুয়াদের দাবি, শিক্ষকেরা বলছিলেন, ব্যাগের চেন খোলো, তারপর জামা-প্যান্ট সার্চ করা শুরু করে। ব্যাগ অবধি ঠিক ছিল, কিন্তু জামা-প্যান্ট কেন? সেই কারণেই তাঁরা আপত্তি দেখান। অন্যদিকে শিক্ষকদের দাবি, মেটাল ডিক্টেটার হাতে দেখেই সমস্যা শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা। বাধা দেয় তল্লাশিতে।
শিক্ষকদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় পরীক্ষার্থীদের। এর পর বিনা প্ররোচনায় তাঁরা শিক্ষকদের উপরে হামলা চালান বলে অভিযোগ। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হয়েছে। এমনকি, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে স্কুলে যায় বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ বাহিনী। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। চার থেকে ছয় জন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। আমি রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। যা শুনেছি, চেকিংয়ের সময় সমস্যাটা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা চেক করতে দেবে না বলে হইচই শুরু করে। চেকিংটা খুব স্বাভাবিক একটা পদ্ধতি পরীক্ষার সময়। আমাদের ২ হাজার ৮৯টা ভেন্যু রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিক রিপোর্টের ওপর ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এই রকমের ঘটনা না ঘটে, সে দিকে নজর রেখে আমরা পদক্ষেপ করব।
বলা বাহুল্য, এবার পরীক্ষা চলাকালীন যাতে না কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তাই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল সংসদ। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালালেন পরীক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত, গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে মালদহের মানিকচকের এনায়েতপুর হাইস্কুলে বাইরে থেকে দেদার নকল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছিল। পরীক্ষা শুরুর পর দেখা গিয়েছিল, কয়েকজন যুবককে প্রাচীরের উপরে উঠে ক্লাসঘরের জানলা লক্ষ্য করে কাগজ সরবরাহ করছে। পুলিশ বাধা দিতে এলে, বাইরে জড়ো হয়ে থাকা লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে। পাল্টা লাঠিও চালায় পুলিশ। কয়েকজন যুবককে মাঠের মধ্যেই কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ কর্মীরা। সেই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১৮ জনকে।