রাজ্যের পুরসভাগুলির জঞ্জাল সাফাই নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আসছিল। অনেক জায়গায় নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে না, রাস্তাঘাটে ময়লা জমে থাকছে, ফলে নাগরিকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে বার বার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু শহর নয়, জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিরও জঞ্জাল নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে না। পুরসভা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলি এই কাজের দায়িত্ব রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য জুড়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ভাবে জঞ্জাল সাফাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, এর ফলে অন্তত জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজটা নিয়মিত হবে এবং রাজ্যের বিভিন্ন শহরে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে পুর দপ্তরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে বেসরকারি এজেন্সি নিয়োগ করা হবে।
দক্ষিণ ভারতের বহু রাজ্য এই মডেল অনুসরণ করছে। কলকাতাতেও বেসরকারি এজেন্সিগুলি এ ধরনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিল। এক সময়ে এই এজেন্সিগুলির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা পুরসভার কর্মী দিয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে শহর সাফাই করবে। কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশকে শহরের ভোটারদের টানার এক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ লোকসভা নির্বাচনে শহুরে ভোটারদের বড় অংশ চলে গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। তাই বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে থাকতেই শহুরে ভোটারদের মন পেতে সব পুরসভা এলাকার আবর্জনা এবং জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য সরাসরি পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরকে দায়িত্ব দিলেন তিনি।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সেই নির্দেশ পাওয়ার পরই পদক্ষেপ শুরু করেছে পুর এবং নগরোন্নয়ন দপ্তর। এ বার থেকে রাজ্যের পুর দপ্তর সরাসরি এই কাজের দায়িত্ব নেবে। এর ফলে যেমন শহরের সৌন্দর্যায়ন বাড়বে, তেমনিই কঠিন বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়াও গতি পাবে। নবান্ন সূত্রে খবর, সম্প্রতি রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী বারাসত পুরসভা এলাকায় আবর্জনা জমে থাকার অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শুধু বারাসত নয়, কলকাতা-সহ একাধিক পুরসভা এলাকাতেও নিয়মিত সাফাই না হওয়ার অভিযোগ বারবার উঠেছিল। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর তিনি নির্দেশ দেন, যাতে
আর কোনও পুরসভাকে আলাদা ভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে না হয়, বরং রাজ্য সরকারই কেন্দ্রীয় ভাবে এই কাজের তত্ত্বাবধান করবে।
প্রশাসনিক মহলের মতে, কেন্দ্রীয় ভাবে এই কাজ পরিচালিত হলে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও গতি আসতে পারে। তবে স্থানীয় পুরসভাগুলির ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি। সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে নতুন পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ শহরের চেহারা বদলাতে পারে কি না এবং রাজনৈতিক ভাবে কতটা প্রভাব ফেলে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।