• পরীক্ষার ঠিক আগের দিনই বাবা চলে গেলেন, বাবার স্বপ্ন পূরণে ভেজা চোখেই উচ্চ মাধ্যমিকে বসল মেয়ে
    এই সময় | ০৫ মার্চ ২০২৫
  • পরীক্ষার ঠিক আগের দিন বাবা চলে গেলেন। রাত অবধি বাবার দাহকাজ। প্রথমে ভেবেছিল আর পরীক্ষাই দেবে না বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রমের ছাত্রী সুস্মিতা সাহানি। কিন্তু বাড়ির সকলে বোঝায়, বাবার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে পাশ করবে, অনেক বড় হবে। তাই মাথার উপর থেকে বটগাছটা সরে গেলেও বুধবার পরীক্ষা হলে এসে পৌঁছয় সে।

    এক রাতের ঝড়েই উপড়ে পড়েছে সাহানি পরিবারের বটবৃক্ষ। সুস্মিতার মা মাছ বিক্রি করেন, বাবা মহাদেব সাহানি গাড়ি চালাতেন। মেয়ে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে। তা নিয়ে মা, বাবার চোখে কত স্বপ্ন। সুস্মিতা লেখাপড়ায় ভালো, খুব ভালো ভলিবলও খেলে। বাবা চাইতেন, মেয়ে ভালো রেজাল্ট করুক। নিজের পছন্দের দিক বেছে নিক।

    গত সোমবার মহাদেব সাহানি পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাতেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মঙ্গলবার মৃত্যু হয়। বাবার এ ভাবে চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়ে সুস্মিতা। ঠিক করে পরীক্ষা দেবে না। কিন্তু বাড়ির লোকজন, স্কুলের স্যরেরা অনেক বোঝানোর পর, বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে এ দিন পরীক্ষায় বসে সে।

    পরীক্ষা হলে এসে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে সুস্মিতা। বলে, ‘বাবার ইচ্ছা ছিল ফার্স্ট ডিভিশন পাব। তার ইচ্ছা পূরণ করতে পরীক্ষা দিতে এসেছি।’ বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রমের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, খবর পেয়েই আমরা ওর বাড়িতে যাই। জানি এই অবস্থায় পরীক্ষায় বসাটা কঠিন ছিল। তবে ও ছোট থেকেই খুব মেধাবী। ও আন্তঃরাজ্য ভলিবল খেলোয়াড়। কিন্তু বাবা চাইত উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করুক। সে কারণে ও এ বছর ট্রায়ালেও যায়নি সে। ওকে সকলে বোঝাই, বাবার শেষ ইচ্ছা যে সন্তানকেই পূরণ করতে হবে। এর পরই পরীক্ষায় বসে।’

    তবে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে বন্ধুদের দেখে কান্না ধরে রাখতে পারেনি সে। একটা ঝড়ে পৃথিবীটা যে এ ভাবে ওলট পালট হয়ে যায়, ভাবতেও পারেনি সুস্মিতা।

  • Link to this news (এই সময়)