• প্রশান্ত ১৩৬, অলক ৭৭, রক্তদানে সেঞ্চুরি করে কী বার্তা চন্দননগরের ২ বন্ধুর?
    এই সময় | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • প্রথম বার রক্তদান করতে গিয়ে বিস্তর ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ভয় সরে গিয়ে কখন যে ভালোবাসায় বদলে গিয়েছে, তা হয়তো নিজেও টের পাননি। তার মধ্যেই ৫৭ বছরে ১৩৬ বার রক্তদান করে ফেলেছেন প্রশান্ত দাস। চন্দননগরের বউবাজারের বাসিন্দা প্রশান্তর বন্ধু অলক কুমার মণ্ডলও পিছিয়ে নেই। তাঁর ৫৭ বছর বয়স, তার মধ্যেই ৭৭ বার রক্তদান করেছেন তিনি। অলকও চন্দননগরের বাসিন্দা। চন্দননগর খলিসানি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে কর্মরত তাঁরা দুই জন।

    বিপদের সময়ে রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য রক্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র কেউ রক্ত দান করলে তবেই রক্ত পেতে পারেন রোগী। রক্তদান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লাগাতার কাজ করে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু এখনও নানাস্তরে রক্তদান নিয়ে ভয় কিংবা ছুঁতমার্গ রয়েছে বলে মনে করেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে থাকা অনেকেই। সেই আবহেই প্রশান্ত এবং অলকের মতো ব্যক্তি সচেতনতা প্রসারের ক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

    আটের দশকের একেবারে প্রথম দিক, চন্দননগর খলিসানি কলেজে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়েছিল। সেখানেই প্রথম বার রক্তদান করেছিলেন প্রশান্ত, সুচ দেখে ভয়ও পেয়েছিলেন। তার পর থেকে আরও কখনও ভয় পাননি প্রশান্ত। বছরে চার বার করে রক্তদান করেন তিনি। প্রশান্ত অবিবাহিত। মায়ের থেকে উৎসাহ পেয়েছিলেন। এখন দিদি, দাদা, বৌদি ও ভাইপোকে নিয়ে তাঁর সংসার। পরিবার বাদ দিলে তঁর জীবন জুড়ে রয়েছে রক্তদান এবং রক্তদানে উৎসাহ তৈরির কাজ। এখনও পর্যন্ত যতবার রক্তদান করেছেন তাঁর সব তথ্য রেখে দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে ১০০ বার রক্তদানের জন্য রয়েছে একাধিক পুরস্কার ও স্বারক। ২০০২ সালের ১৯ ডিসেম্বর সেবামূলক কাজের জন্য তৎকালীন রাজ্যপাল বীরেন জে শাহর কাছ থেকে সেবা মেডেল পান তিনি। রাজ্যের তরফে সেন্ট জন্স অ্যাম্বুলেন্স ব্রিগেড পুরস্কার পান। ২০০৫ সালে দিল্লির একটি সংস্থা সোনার মেডেলের সঙ্গে কুড়ি হাজার টাকার চেক দেয় প্রশান্তকে। কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। ২০১৩ সালে ইন্দিরা গান্ধী এক্সিলেটর অ্যাওয়ার্ড পান। ২০২৪ সালে ওডিশার সম্বলপুরে দেশরত্ন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন থেকেও দেওয়া হয়েছে পুরস্কার। এছাড়া আরও একাধিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।

    প্রশান্ত বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ১৩৬ বার রক্ত দিয়েছি। আমার রক্তে একটা মানুষের জীবন বাঁচবে। বছরে চার বার রক্ত দিই। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত রক্ত দেওয়া যায়।’ প্রশান্তর বন্ধু অলোক জানান, তাঁরা ২ জনে একই সঙ্গে কলেজে পড়াশোনা করেছেনয। এনএসএস-এ ক্যাম্পের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল। তিনি বলছেন, ‘পরিবার থেকে কখনও রক্তদানে বাধা পাইনি। আমার স্ত্রী এবং পরিবারের বাকিরা সকলেই রক্ত দান করেন।’

    হুগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারী মৃদঙ্গ মৌলি কর জানান, রক্ত দেওয়ার জন্য বেশ কিছু নিয়ম আছে। তিন মাসের আগে দ্বিতীয়বার রক্ত দেওয়া যায় না। একজন মানুষ বছরে তিন থেকে চারবার রক্ত দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘উনি এতবার রক্ত দিয়েছেন তা প্রশংসাযোগ্য। তবে বারবার রক্ত দিলে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। উনি যদি অসুস্থ হয়ে যান তাহলে সেই কথা শুনে বাকিরাও পিছিয়ে যাবে। সবাইকে বলব অতি উৎসাহিত হয়ে এই কাজটা না করাটাই ভালো।’

  • Link to this news (এই সময়)