কসবায় একই পরিবারের তিন সদস্যের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যতটুকু তথ্য সামনে এসেছে, তা যেমন রহস্যময়, তেমনই মর্মান্তিক। বুধবার এই ঘটনায় মৃত তিনজনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসে। তাতে দেখা গিয়েছে, রায় দম্পতির আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে খুনই করা হয়েছে!
কেন একথা বলা হচ্ছে? কারণ, সোমনাথ রায় ও তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা রায়ের একমাত্র সন্তান রুদ্রনীল রায়ের নাকে ও ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যা দেখে ও বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্য়া, খুব সম্ভবত একরত্তি ওই শিশুর মুখে কিছু একটা চেপে ধরা হয়েছিল। তাতেই তার কোমল ত্বকে আঘাতের চিহ্ন তৈরি হয়।
শিশুটির যে শ্বাসরোধ হওয়ার ফলে প্রাণ গিয়েছিলে, সেটাও ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। এবং সেখান থেকে মনে করা হচ্ছে তাকে খুন করা হয়েছে। তাহলে কি তার বাবা-মা, কিংবা তাঁদের মধ্যে কেউ একজন তাকে খুন করেছিলেন? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে, পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ঋণে জর্জরিত ওই পরিবারের প্রধান দুই সদস্য সোমনাথ ও সুমিত্রা প্রথমে তাঁদের সন্তানকে খুন করেন এবং তারপর নিজেরা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। উল্লেখ্য, কসবায় যখন রায় দম্পতির দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তখন বাবার ঝুলন্ত দেহের সঙ্গেই ওড়না দিয়ে শক্ত করে বাঁধা ছিল তাঁদের সন্তানের নিথর শরীর! তাহলে কি সোমনাথ নিজেই আত্মঘাতী হওয়ার আগে ছেলেকে ওভাবে নিজের সঙ্গে বেঁধে নিয়েছিলেন?
এমন দৃশ্য কল্পনা করলেও যেকোনও মানুষের বুক কেঁপে উঠবে। কিন্তু, প্রাথমিকভাবে তেমনটাই ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, সুমিত্রার ঘাড়ে দড়ির দাগ ছিল। ডান দিকে তাঁর মাথার পিছন দিকের ত্বক থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। সুমিত্রার ডান চোখ কালো হয়ে গিয়েছিল। গলায় ফাঁস দিয়ে ঝোলার কারণেই এই ক্ষত বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে, সোমনাথের ক্ষেত্রে ঘাড় এবং গলায় একটিই দড়ির দাগ পাওয়া গিয়েছে। এই দাগও গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলার কারণে তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কসবার হালতু এলাকার যে বাড়ি থেকে এই তিনটি দেহ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকেই একটি 'সুইসাইড নোট' পাওয়া যায় বলেও দাবি করা হচ্ছে। তাতে সম্পত্তি নিয়ে রায় পরিবারে সঙ্গে সোমনাথের মামা-মামীর বিবাদের কথা বলা হয়েছে। এই ঘটনায় সোমনাথের মামা প্রদীপকুমার ঘোষাল এবং মামী নীলিমা ঘোষালের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘোষাল দম্পতিকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিলেও তাঁরা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, পেশায় অটোচালক সোমনাথ অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হত তাঁর।
আরও জানা গিয়েছে, একটি ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও বাজারে আরও লক্ষাধিক টাকা দেনা করেছিলেন। কিন্তু, সেই টাকা শোধ করতে পারছিলেন না তিনি। তাই বাড়ি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, মামা-মামী বেঁকে বসায় সেটা সম্ভব হয়নি।
উপরন্তু শোনা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের এক 'লোন রিকভারি এজেন্ট'-এর সঙ্গেও রায় পরিবারের বিবাদ হয়েছিল। পুলিশ সেই ব্যাঙ্ককর্মীকেও শনাক্ত করার চেষ্টা করছে বলে জানা গিয়েছে।