• ঠাকুরের সামনেই পায়েসে ঘুমের ওষুধ, একে-একে মেয়ে, স্ত্রী, বউদিকে খুন করেন প্রসূন?
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • ট্যাংরা কাণ্ডে অন্যতম মূল অভিযুক্ত তথা দে বাড়ির ছোট কর্তা প্রসূন দে মুখ খুলতেই সামনে এলে হাড় হিম করে দেওয়া এক ঘটনাক্রম। যদিও এখনও এই ঘটনায় দে বাড়ির বড় কর্তা প্রণয় দে-কে গ্রেফতার করা বা জেরা করা সম্ভব হয়নি পুলিশের পক্ষে। কিন্তু, প্রসূন পুলিশকে যা জানিয়েছেন, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে ভবিষ্যতে মূল অভিযুক্ত হিসাবে তাঁকেই কাঠগড়ায় তোলা হবে।

    প্রসূনের দাবি, ঋণে জর্জরিত দে পরিবার সমস্ত দায় থেকে মুক্তি পেতে সপরিবার আত্মহত্যার যে পরিকল্পনা করেছিল, সেখানে 'প্ল্যা-এ' বলতে ছিল ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়ে মৃত্যুবরণ করা। কিন্তু, আদতে পরিবারের ছয় সদস্যের মধ্যে একজনও ঘুমের ওষুধ মেশোনা পায়েস খেয়ে মারা যাননি । আর তখনই একে একে 'প্ল্যান-বি', 'প্ল্যান-সি' প্রয়োগ করা হয়! যা শুনলে অতি বড় সাহসীরও বুক কেঁপে উঠবে।

    প্রসূন জানিয়েছেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পায়েস রান্না করেন তাঁর স্ত্রী রোমি। তারপর রোমি ও প্রসূন চলে যান তিনতলার ঠাকুর ঘরে। বাড়ির বিগ্রহের সামনেই প্রসূন সেই পায়েসে ঘুমের ওষুধ মেশান এবং স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।

    এরপর রোমি তাঁর স্বামী প্রসূন ও মেয়ে প্রিয়ম্বদাকে পায়েস খেতে দেন এবং সেই একই পায়েস বাড়ির বড় গিন্নি সুদেষ্ণা খেতে দেন তাঁর স্বামী প্রণয় ও ছেলে প্রতীপকে। কিন্তু, ১৮ তারিখ প্রসূন জেগে ওঠেন সকলের প্রথমে। তিনি বোঝেন ঘুমের ওষুধে কাজ হয়নি। প্রসূন তাঁর দাদাকে ডাকতে যান এবং দেখেন তিনিও বেঁচে আছেন। এরপর একে-একে রোমি ও সুদেষ্ণাকেও ডাকা হয়।

    তাঁরা চারজন একসঙ্গে বসে আলোচনা শুরু করেন, এবার তাহলে কীভাবে মরা যায়? প্রথমে ঠিক হয়, সকলে মিলে বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দেবেন! কিন্তু, দুই বউ তাতে রাজি হননি। তারপর হাতে শিরা কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

    সেই পরিকল্পনা প্রয়োগের আগে প্রসূন আর রোমি যান তাঁদের 'আদরের' একমাত্র মেয়ে প্রিয়ম্বদার ঘরে। সে তখনও ঘুমের ওষুধের প্রভাব থেকে পুরোপুরি বেরোতে পারেনি। প্রসূন মেয়ের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন! মেয়ে ছটফট করে উঠতেই রোমি তার পা দু'টি চেপে ধরেন।

    এরপর আসে রোমির পালা। রোমি নিজে ছুরি দিয়ে নিজের হাতে শিরা কাটলেও তাতে লাভ হয়নি। তখন প্রসূনই কাগজ কাটা সেই ছুরি দিয়ে স্ত্রীর হাতে শিরা কেটে দেন। ছোট জা-এর চিৎকার শুনে সুদেষ্ণা সেখানে আসেন। তিনি রোমির দেহ দেখে চুপ করে যান।

    এরপর সুদেষ্ণা ও প্রসূন অন্য ঘরে চলে যান। একইভাবে নিজের হাত কাটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সুদেষ্ণা। তখন প্রসূন তাঁর হাতের শিরা ও গলার নলি কেটে তাঁকে খুন করেন। এর প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর প্রসূন রক্তমাখা জামা পরেই দাদার সামনে আসেন। তার মাঝে নাবালক ভাইপোকেও খুনের চেষ্টা করেন। সবশেষে নিজে ফের ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়েন।

    কিন্তু, তিনি সম্ভবত তাঁর দাদার হাতের শিরা কাটার চেষ্টা করেননি। কারণ, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি। এদিকে, ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় ফের প্রসূনের ঘুম ভাঙে। এবং তারপরই গাড়ি নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়!

    এদিকে, গত সোমবারই প্রসূনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয় এবং ওই দিনই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে প্রসূন জানান, তিনি কোনও উকিল নেবেন, আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন না। এমনকী, লিগাল এইডের পক্ষ থেকে তাঁকে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি রাজি হননি।

    সূত্রের দাবি, সব শুনে বিচারক তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি কি বিনা পয়সায় সরকারি উকিল পেলেও তা নেবেন না? পুলিশ যে তাঁকে হেফাজতে নিতে চাইছে, তা নিয়ে কিছুই বলবেন না? এমনই বেশ কিছু প্রশ্ন তাঁকে বিচারক করেন। কিন্তু, প্রসূন সব প্রশ্নের উত্তরেই ঘাড় নেড়ে 'না' বলেন। এরপর আদালত আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রসূনকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)