আস্ত স্কুলের পাতাল-প্রবেশ ইসিএলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তপ্ত অণ্ডাল
বর্তমান | ০৬ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, অণ্ডাল: প্রবল শব্দে মাটি ধসে ভেঙে পড়ল স্কুল বাড়ির একাংশ। কয়েক মিটার গভীরে ঢুকে গিয়েছে পাকা স্কুল বাড়ি। স্কুল বাড়ির পাশে থাকা পাকা বাড়ি ধসের জেরে ভেঙে চৌচির। ঘটনার জেরে একটি চারচারা গাড়ি ও বাইক ভেঙে গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে অণ্ডাল থানার পিডি(প্রসন্ন দত্ত) কাজোড়া কোলিয়ারি এলাকায় ধস গিয়ে তীব্র আতঙ্ক। জলবহুল এলাকায় স্কুল ধসে যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় পাঁচশো পরিবারের রাতের ঘুব উবে গিয়েছে। সকলের মুখে এক কথা, স্কুল চলাকালীণ এই ঘটনা ঘটলে কত খুদে মাটি চাপা পড়ত! ঘটনার পরই ইসিএলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকাল থেকে পুরো এলাকা ঘিরে দেয় ইসিএল। ভগ্নপ্রায় স্কুল বিল্ডিং ও বাড়ি ভাঙার কাজ করা হয় জেসিবি দিয়ে। ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে ইসিএলের আধিকারিক।
কয়লা ক্ষেত্র রাষ্ট্রায়ত্ব করণের আগে এই এলাকায় বেসরকারি মালিকের অধিনে কোলিয়ারি চালু ছিল। খাস কাজোড়া কোলিয়ারি এলাকার অধিনে সেই মালিকের নাম অনুযায়ী এলাকার নাম পিডি কাজোড়া। এখানেই বর্তমানে ইসিএলের খাস কাজোড়া কোলিয়ারির ১০,১১ নম্বর পিট রয়েছে। তার অদূরেই ১৯৯৭ সালে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি গড়ে ওঠে। সিবিএসসি বোর্ড অনুমোদিত স্কুলটিতে প্রিনার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন হয়। স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল রীনা বার্নওয়াল জানিয়েছেন স্কুলে ১১০ জন পড়ুয়া ও ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এই স্কুল বিল্ডিংই মাটির নীচে ধসে গিয়ে ভেঙে পড়ে। স্কুলের পাশেই ছিল বাড়ি ছিল দশরা মিঁয়ার। কিছুক্ষণ আগেই নামাজ পড়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তারই মধ্যে স্কুল বাড়ি সহ তাঁর বাড়ি ভেঙে পড়ে। এদিন সকালে পুরো এলাকা থমথমে। পুলিসের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা ঘিরে দিয়েছে ইসিএল। তাঁদের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে জেসিবি মেশিন দিয়ে বিপদজনক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল বিল্ডিং ও বাড়ির অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। ঘটনার জন্য ইসিএলকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিকাশ বার্নওয়াল, পারভেজ খানরা অভিযোগ করেন, ইসিএলের মাটির নিচ থেকে বেপরোয়া ভাবে কয়লা তুলে দিলেও বালি ভরাট করছে না। বালি কালোবাজারি করে বিক্রি করে দিচ্ছে এই কারণেই এই ঘটনা। সামিমা খাতুন, রাজকুমারি দেবীদের অভিযোগ, ইসিএল এখন মাটির নিচে কয়লা ভাঙার জন্য জোরালো বিস্ফোরক ব্যবহার করছে। যারজেরে বহু বাড়িতে ফাটল ধরেছে। এদিন বহু বাসিন্দাদের দেখা গিয়েছে ধসের আতঙ্কে বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গাছতলায় সারি দিয়ে দাঁড় করানো স্কুলের বেঞ্চ। তারই একটি বেঞ্চের উপর স্কুলের ছাত্র হাজিরার খাতা ও মা সরস্বতীর প্রতিমা। স্কুলের শিক্ষিকা দীপমালা শুল্কা, রীনা বার্নওয়ালদের দাবি, ইসিএল বিভিন্ন এলাকায় বিপদজ্জনক ঘোষণা করছে। আমাদের এলাকায় তেমন কোন নোটিশ করেনি। বুধবার থেকেই স্কুলের পরীক্ষা ছিল। আমরা পড়ুয়াদের নিয়ে পথে বসলাম। ইসিএল বিকল্প ব্যবস্থা করুক। অভিভাবক অজয়কুমার সিং বলেন, মধুসুদনপুর, মুকুন্দপুর, পড়াশকোল সহ বহু গ্রাম থেকেই পড়ুয়ারা আসে। চানকের পাশের অংশ আমরা জানি সুরক্ষিত। এখন দেখছি ইসিএলের আমলে কোন কিছুই সুরক্ষিত নেই। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় রানিগঞ্জের তৃণমূল শহর সভাপতি রূপেশ যাদব ইসিএলের বিরুদ্ধে তোপা দাগেন।
ইসিএলের খাস কাজোড়ার এজেন্ট মনোজ মিশ্র বলেন, ইসিএলের জমিতেই স্কুলটি ছিল। শিক্ষার বিস্তারের জন্য আমরা অন্যত্র স্কুল গড়ে দেব। কোম্পানি আমলে অনিয়ন্ত্রিত কয়লা তোলার জন্য এই ঘটনা।