• নয়াগ্রামের হাট থেকে পটশিল্প কিনতে মানুষের ঢল নামছে শনি ও রবিবার
    বর্তমান | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পিংলা: পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের নয়াগ্রামে পটশিল্পীদের গ্রামে শনি ও রবিবারের হাট ঘিরে ব্যস্ততা তুঙ্গে। ভিন জেলা তো বটেই, ভিন রাজ্য থেকেও মানুষ আসছেন পটশিল্পীদের হাতের কাজ দেখতে। লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে গ্রামবাসীদের। শিল্পীদের তৈরি পটের বিক্রিও আগের তুলনায় বেড়েছে। জানা গিয়েছে, আগে নয়াগ্রামে নিয়ম করে হাট বসত না। কিন্তু পিংলা ব্লক প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিদের উদ্যোগে নিয়ম করে হাট বসায় জনসমাগম বাড়ছে। শিল্পীদের সুবিধার্থে পুরোনো শিল্পকেন্দ্রটি ঢেলে সাজা হয়েছে। শিল্পীদের পসরা নিয়ে বসার জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ স্টেজ। পর্যটকদের জন্য দু’টি শৌচালয় করা হচ্ছে। এই কাজের জন্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। 


    রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া বলেন, পিংলার পটশিল্পের সুনাম বিশ্বব্যাপী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা পটশিল্পীদের পাশে আছেন। পটশিল্পীরা বিভিন্ন মেলায় যাচ্ছেন। শিল্প বিক্রি করে স্বনির্ভর হচ্ছেন। 


    পিংলা বিধানসভার বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন, বর্তমানে পটশিল্পীদের তৈরি শিল্পকলা বিদেশেও যাচ্ছে। শুনেছি তাঁদের হাটে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। শিল্পীদের সবরকম ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। 


    প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দূরে পিংলার নয়াগ্রাম। কলকাতা থেকে গাড়িতে এন এইচ ৬ ধরে প্রথমে ডেবরা, সেখান থেকে বালিচক হয়ে পিংলার নয়াগ্রাম যাওয়া যায়। এছাড়া বারবেটিয়া হয়েও নয়াগ্রাম যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। কয়েকশো বছর ধরে বংশপরম্পরায় গ্রামের বাসিন্দারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত। বছরের পর বছর গ্রামবাসীদের হাতেই ফুটে উঠছে রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডীমঙ্গল সহ পুরাণের নানা গল্প, দেবদেবীর ছবি। শিশুরাও বেশিরভাগ সময়ে রং-তুলির সঙ্গেই কাটায়। তাঁদের মধ্যেই অনেকে নানা ধরনের গান বাঁধে। গ্রামে নতুন অতিথি খরিদ্দার এলেই তাঁরা গান শোনায়। এবছর বিক্রি ভালো হওয়ায় গ্রামের মানুষের খুশি যেন দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।  এবছর খাদির কাপড়ের উপর পটের কাজ করা ওড়না, টি শার্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে এই শিল্প দেখা যাচ্ছে কাঁসার থালা, ট্রে, কেটলি, ছাতা, কুলো থেকে বেতের তৈরি ছোট ছোট বাক্সেও। যেন সবেতেই জায়গা করে নিয়েছে পটশিল্প। গ্রামের ভিতর বাড়ির দেওয়াল থেকে উঠোন, সর্বত্র পটের ছোঁয়া। হাটের দিন শিল্পীরা নিজ নিজ বাড়ির সামনেই পটচিত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। জানা গিয়েছে, হাট থেকে পট চিত্রের ওড়না, চায়ের কাপ, হাত পাখা ব্যাপক সংখ্যায় বিক্রি হচ্ছে। শনি ও রবিবার ছাড়াও শুক্রবারও বহু মানুষ আসছেন। 


    এদিন পটশিল্পী বাহাদুর চিত্রকরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, হাটে ভালোই লোক হচ্ছে। প্রচার হলে আরও মানুষের সমাগম হবে। এবছর শীতকালে ভালোই বিক্রি হয়েছে। প্রচুর শিল্পী বিভিন্ন মেলায় গিয়ে হাতে তৈরি জিনিস বিক্রি করে এসেছেন। পটশিল্পী মুস্তফা চিত্রকর ও সোনিয়া চিত্রকর বলেন, ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এবছর কলকাতায় গিয়েছিলাম মেলায়। সেখানেও ভালোই বিক্রি হয়েছে। প্রশাসন শৌচালয়, স্টেজ তৈরি করে দিচ্ছে। খুব উপকার হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)