• বোলপুরে উচ্চ মাধ্যমিক চলাকালীন বাবার মৃত্যু মনের জোরে পরীক্ষা দিলেন ছাত্রী
    বর্তমান | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: পড়ুয়াদের শিক্ষাজীবনে উচ্চ মাধ্যমিক অন্যতম বড় পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা চলাকালীন এক পরীক্ষার্থীর বাবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটল বোলপুরে। বাবার মৃত্যুর খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী সুস্মিতা সাহানি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় পরীক্ষার আগে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। পড়াশোনার পাশাপাশি ভলিবল খেলায় অত্যন্ত পারদর্শী সুস্মিতা। কিন্তু সামনে বড় পরীক্ষা, তাই তাঁর বাবা বলেছিলেন, মন দিয়ে পড়তে। বাবার কথা রাখতে রাজ্যস্তরে ভলিবল প্রতিযোগিতার ট্রায়াল ছেড়ে পড়াশোনায় মন বসান সুস্মিতা। তবে বাবার মৃত্যুর খবরে তাঁর মন ভেঙে যায়। বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা তাঁকে পরীক্ষায় বসার জন্য বোঝান। তাতেই মন খারাপ নিয়ে পরীক্ষা দিতে যান সুস্মিতা।


    সুস্মিতার বাড়ি বোলপুরের মকরমপুরে। প্রায় চার বছর ধরে ওই এলাকার রাস্তা কঙ্কালসার অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি সে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছে পূর্তদপ্তর। মেয়ের পরীক্ষা, তাই সোমবার পেশায় গাড়ি চালক মহাদেব সাহানি দুর্গাপুর থেকে বোলপুরে ফেরেন। রাতে মালিকের কাছে গাড়ি রেখে নিজের সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।‌ কিন্তু কুখ্যাত ওই রাস্তায় তাঁর সাইকেল পাথরে লেগে উল্টে যায়। তাতেই মহাদেব মাথায় আঘাত পান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বোলপুরের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা করার পর বাড়ি ফিরে আসেন। মঙ্গলবার সকালে সুস্মিতার হাতে চা খান। কিন্তু দুপুরে আচমকা তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। এমতাবস্থায় তাঁকে মহকুমার সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা শেষ মুহূর্তে তাঁর ‘ব্রেন হ্যামারেজ’ এর বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁকে বাঁচানো যায়নি। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েন সুস্মিতা। ‌মঙ্গলবার রাতেই সতীপীঠ কঙ্কালীতলায় তাঁর বাবাকে দাহ করা হয়। 


    এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সুস্মিতা পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ‌বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার সকালে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হন স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্তকুমার দাস। তিনি, অন্যান্য শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা তাঁকে বোঝালে সুস্মিতা পরীক্ষায় বসতে রাজি হন। এরপর প্রশান্তবাবু নিজের বাইকে চাপিয়ে তাঁকে পরীক্ষা কেন্দ্র বোলপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়ে যান।‌ সেখানেও ফের কান্না ভেঙে পড়েন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘মাথায় চোট লেগে বাবা মারা যাবে ভাবতে পারছি না। খারাপ রাস্তার জন্যই বাবা মারা গেল। বাবা বলেছিল, আমি যেন প্রথম বিভাগে পাশ করি। ‌কিন্তু আমাকে একা করে চলে গেল। এখন এই রেজাল্ট আমি কাকে দেখাব।’ তবে শেষমেশ তিনি দ্বিতীয় পত্রের ইংরেজির পরীক্ষা ভালোভাবেই দিয়েছেন বলে প্রশান্তবাবু জানান। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। তবে ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরীক্ষায় বসতে রাজি করাই। সুস্মিতা যেভাবে মনের জোরে পরীক্ষা দিল, তা আগামী দিনে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’ -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)