উত্তরবঙ্গে এডব্লুডি পদ্ধতিতে কার্বন ফার্মিং, ধান চাষে নতুন দিশা দেখাচ্ছে সাতমাইল সতীশ ক্লাব
বর্তমান | ০৬ মার্চ ২০২৫
রাজীব বর্মন, দেওয়ানহাট: পরিবেশবান্ধব ধান চাষের পাশাপশি কার্বন ফাইন্যান্স সংগ্রহের মাধ্যমে কৃষকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়ে ধান চাষে নতুন দিশা দেখাচ্ছে কোচবিহারের সাতমাইল সতীশ ক্লাব। ইতিমধ্যেই সাতমাইল সতীশ ক্লাবের বাস্তবায়নে ও উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় কোচবিহার জেলার ১২টি ব্লকে এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায় দু’টি ব্লকে অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং প্রকল্পের (এডব্লুডি) মাধ্যমে ধান চাষ করছেন কৃষকরা। এই বিশেষ পদ্ধতিতে কোচবিহার জেলায় এখনও পর্যন্ত ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করেছেন প্রায় ৫৫ হাজার কৃষক। পরিবেশ রক্ষায় এই বিশেষ পদ্ধতিতে ধান চাষ দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে কোচবিহার জেলায় প্রথম হচ্ছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।
আগামীতে গোটা রাজ্য থেকে এই বিশেষ পদ্ধতিতে এক লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে টার্গেট উত্তরবঙ্গ থেকে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা। এই প্রকল্পে সফলতা আনতে কোচবিহার জেলা থেকে ২০২৩-’২৪ বর্ষে ৪০০টিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক কৃষক পরিবার থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন কৃষিতে যুক্ত ১২ জন ব্লক সমন্বয়কারী ও জেলা সমন্বয়কারী নিযুক্ত করে প্রকল্পে গতি আনার কাছ চলছে জোরকদমে।
বালা গ্রামের কৃষক পূর্ণেশ্বর বর্মন বলেন, তিন ধানের মরশুমে এই বিশেষ পদ্ধতিতে ধান লাগিয়েছি। তাতে ৩০ শতাংশ সেচ কম লেগেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। সাতমাইল সতীশ ক্লাবের সম্পাদক অমল রায় বলেন, দু’বছর ধরে আমরা এডব্লুডি পদ্ধতিতে কৃষকদের পরিবেশেবান্ধব ভাবে ধান চাষ করার জন্য প্রচার চালাচ্ছি। যাতে কৃষকরা জমিতে ৩০ শতাংশ কম জল ব্যবহার করে চাষে সেচের খরচ অনেকটাই কমাতে পারেন। পাশাপশি ধানের জমিতে লাগাতার জল দিয়ে রাখায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই বিশেষ পদ্ধতিতে ধান চাষে ওই মিথেন গ্যাস কম উৎপন্ন হয়। ফলে ওই চাষের জমিতে রোগ পোকাও কম হয়। যে পরিমাণ মিথেন গ্যাস কম উৎপন্ন হবে সেই হিসেবে কৃষকরা টাকাও পাবেন। ফলে ক্রমশ এই বিশেষ পদ্ধতিতে ধান চাষে এগিয়ে আসছেন কৃষকরা। আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছে কেশর ক্লাইমেট ইন্ডিয়া নামে একটি সংস্থা। কোচবিহারের ১২টি ব্লকে ইতিমধ্যেই ৫৫ হাজার কৃষক যুক্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিভাগের প্রধান আভাস সিনহা বলেন, এডব্লুডি পদ্ধতিতে ধান চাষ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি সহায়ক পদ্ধতি। সেই সঙ্গে এই পদ্ধতিতে মাটির স্বাস্থ্য উন্নত হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।