• ১৯ বছর পর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নিজের ক্লাসরুমে মহকুমা শাসক
    বর্তমান | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: সেই ২০০৬ সাল। আর এখন ২০২৫। দীর্ঘ ১৯ বছর পর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নিজের ক্লাসরুমে ফিরলেন জলপাইগুড়ি সদরের মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী! বেঞ্চে বসে পড়ুয়াদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন নিজের ছাত্র-জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি।


    তবে সেদিনের সঙ্গে বুধবারের ছবিটা একটু ভিন্ন ছিল। ১৯ বছর আগে তমোজিৎ চক্রবর্তী ছিলেন জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। আর এদিন তিনি ছিলেন ওই কলেজেরই ‘শিক্ষকের’ ভূমিকায়। জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্যোগে পড়ুয়াদের জন্য সফ্ট স্কিল অ্যান্ড পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন মহকুমা শাসক। কিন্তু নিজের কলেজে পা রাখতেই তিনি ফিরে যান দু’দশক আগে।


    কেমন ছিল তাঁর ছাত্রজীবন? তা বলতে গিয়ে স্মৃতিমেদুরতায় বুঁদ হয়ে যান পোড় খাওয়া ওই প্রশাসক। বলেন, ইঞ্জিনিয়ার হব এই স্বপ্ন নিয়ে কলকাতা থেকে এতদূরে এসে ভর্তি হয়েছিলাম। এই কলেজের ক্যাম্পাস থেকেই চাকরি জুটে গিয়েছিল। একাধিক কর্পোরেট সংস্থায় চাকরিও করেছি। কিন্তু তারপর আচমকা পেশাগত জীবনে ইউটার্ন ঘটে যায়। ইঞ্জিনিয়ার থেকে প্রশাসক হয়ে যাই। এনিয়ে পড়ুয়াদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, নিজেকে কখনও ফাঁকি দেবে না। যেটা করবে, সেটাই মন দিয়ে করবে। শুধু পড়াশোনায় ডুবে থাকা নয়, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে, নিজেকে মেলে ধরতে সফ্ট স্কিল ও পার্সোনালিটি কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা এদিন পড়ুয়াদের বোঝান মহকুমা শাসক।


    ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের জীবনে সফল হতে এদিন দশটি টিপসও দেন মহকুমা শাসক। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, আত্মবিশ্বাস, পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, টিমওয়ার্ক ও ব্যক্তিত্ববোধ। 


    সেমিনার শেষে ফেরার পথে বেশ কিছুক্ষণ নিজের ক্লাসরুমে বসে পড়ুয়াদের সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা দেন মহকুমা শাসক। কার জীবনে কী লক্ষ্য, তা জানতে চান। কথাবার্তার ফাঁকে তিনি বলেন, আমি মাঝের বেঞ্চে বসতে ভালোবাসতাম। কিন্তু প্রফেসররা এসে সামনের বেঞ্চে তুলে নিয়ে আসতেন। ক্লাসের অবসরে কলেজের ক্যান্টিন ছিল আমাদের প্রাণ। আজ এই কলেজের করিডরে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ছাত্রজীবনের সমস্ত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই কলেজের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ সব যেন আমার সঙ্গে কথা বলছে। আমাদের সময়ের কয়েকজন শিক্ষককেও দেখতে পেলাম। এই মুহূর্তগুলো মনের মণিকোঠায় ধরে রাখতে চাই।


    ইঞ্জিনিয়ার থেকে প্রশাসক? কোনটা বেশি পছন্দের? মুচকি হেসে মহকুমা শাসকের জবাব, দু’টো দু’রকম। যখন যেটা করি, সেটা মন দিয়ে করার চেষ্টা করি।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)