• নিজের বাড়িতেই দু’দিন ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’, ১১ লক্ষ খোয়ালেন বৃদ্ধা,  রাজস্থান থেকে গ্রেপ্তার
    বর্তমান | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদে পা দিয়ে ১১ লক্ষ টাকা খোয়ালেন ৭৬ বছরের বৃদ্ধা। শুধু তাই নয়, প্রতারকদের নির্দেশ মতো নিজের বাড়িতে টানা দু’দিন ‘বন্দি’ হয়ে থাকলেন। 


    ঘটনাটি লেকটাউনের। তদন্তে নেমে রাজস্থান থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে লেকটাউন থানা। প্রতারণার টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে। পুলিস জানিয়েছে, ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে কিছু হয় না। এ বিষয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে লাগাতার প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু মানুষ প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দেন। লেকটাউনের বৃদ্ধা সেরকমই পাতা ফাঁদের শিকার।


    প্রতারকরা যে পদ্ধতিতে ডিজিটাল অ্যারেস্টের নাম করে ফাঁদ পাতে তা রীতিমতো রোমাঞ্চকর। এ বৃদ্ধার ক্ষেত্রেও সেরকম জাল বিছিয়েছিল। বৃদ্ধা লেকটাউন থানার দমদম পার্কের বাসিন্দা। ডিসেম্বর মাসে তাঁর ফোনে  হোয়াটসঅ্যাপে আসে একটি ভিডিও কল। কলটি রিসিভ করে বৃদ্ধা দেখেন ফোনের অপরপ্রান্তে পুলিসের পোশাক পরে বসে এক ব্যক্তি। কিছু বুঝে উঠার আগেই ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি মুম্বই সাইবার ক্রাইম থানার অফিসার।’ বৃদ্ধা ফোন করার কারণ জানতে চান। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার আধারকার্ড থেকে প্রচুর সিমকার্ড তোলা হয়েছে। তা দিয়ে দেশের নানা জায়গায় আর্থিক তছরুপ, যৌন হয়রানি, ভুয়ো বিজ্ঞাপন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই প্রতারণার অভিযোগে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হল।’ তখনও ডিজিটাল অ্যারেস্ট বিষয়টি সম্পর্কে মহিলার কোনও জ্ঞান নেই। জিজ্ঞেস করেন, ‘বিষয়টি কী?’ ওই প্রতারক বলেন, ‘আপনাকে বাড়িতেই থাকতে হবে। বাইরে কোথাও বের হওয়া চলবে না। বাড়িতেই আপনাকে ডিজিটালি অ্যারেস্ট করে রাখা হল।’ ততক্ষণে বৃদ্ধার হাত পা ঠান্ডা। পুলিসের নির্দেশ অমান্য করা উচিত নয় ভেবে টানা দু’দিন নিজের বাড়িতেই বন্দি হয়ে গেলেন। 


    এরপর আবার ফোন। মামলা মেটাতে টাকা দিতে হবে বলে জানাল প্রতারক। মামলার হাত থেকে বাঁচার জন্য বৃদ্ধা একপ্রকার বাধ্য হলেন ১১ লক্ষ টাকা দিতে। তারপর বন্দি দশা থেকে মুক্তি মিলল। পরে পরিচিতদের সঙ্গে আলোচনার পর জানলেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ২৪ ডিসেম্বর লেকটাউন থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। তদন্তে নেমে পুলিস রাজস্থানের বাসক্রিপালনগর এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। ধৃতের নাম মুকেশ কুমার। বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, ডিজিটাল অ্যারেস্ট নতুন ধরনের কোনও প্রতারণা নয়। অনেকদিন ধরেই চলছে। প্রতারকরা কখনও পুলিস অফিসার, কখনও সাইবার ক্রাইম থানার অফিসার, কখনও কাস্টমস, কখনও তদন্তকারী কোনও এজেন্সির নাম করে ফোন করে। যাঁরা ফোন পেয়ে ভয় পেয়ে যান, তাঁরাই প্রতারণার শিকার হয়ে পড়েন।
  • Link to this news (বর্তমান)