• গলানো মোম গায়ে ফেলে মুখে লাথি, বেল্টের ঘা! থানার লকআপে নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ
    এই সময় | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: ছাত্র ধর্মঘটের সমর্থনে নামা একটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মী–সমর্থক চার মহিলার উপর নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে থানার লকআপে। মেদিনীপুর মহিলা থানার লকআপে এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও–র কর্মী–সমর্থক ওই চার মহিলার হাতে–পায়ে গলানো গরম মোম ফেলা, চুলের মুঠি ধরে শূন্যে তুলে পায়ের তলায় বেত দিয়ে মারা, মুখে বুটের লাথি মারা, বেল্ট দিয়ে মারা এবং মেরে থানার মধ্যেই পুঁতে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার জেরে সোমবার, ৩ মার্চ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ডিএসও, এসএফআই–সহ কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন। সে দিনই মেদিনীপুরের পাটনা বাজারের মহিলা থানার লকআপে ওই অত্যাচারের ঘটনা ঘটে, এমনটাই অভিযোগ।

    অন্যদের সঙ্গে ওই চার মহিলা মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনে ধর্মঘটের সমর্থনে পৌঁছন। সেখান থেকে পুলিশ তাঁদের চ্যাংদোলা করে থানায় তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই চার মহিলা বুধবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে প্রধানত কোতোয়ালি থানার ওসি–র বিরুদ্ধে তাঁদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

    ওই মহিলাদের অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোনও সরকারি হাসপাতাল তাঁদের আঘাতের ব্যাপারে মেডিক্যাল রিপোর্ট দিতে চায়নি। নিগৃহীতাদের অভিযোগ, মারধরের সময়ে হিন্দি গান চালিয়ে তাঁদের নাচতে বলে পুলিশ! নিগৃহীতাদের অন্যতম, সুশ্রীতা সরেন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গিয়েছিলম। রাস্তা অবরোধ কিংবা এমন কোনও কাজ করিনি, যাতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পৌঁছনো মাত্রই বিশাল পুলিশ বাহিনী আমাদের চ্যাংদোলা করে তুলে পাটনা বাজারের মহিলা থানায় নিয়ে যায়।’

    তাঁর অভিযোগ, ‘পুলিশ ভ্যান থেকে আমাদের নামিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে, লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয় আমাদের। ওই ওসি এবং পাঁচ জন পুলিশকর্মী আমাদের উপর চড়াও হন। সবাই মিলে লাথি, কিল, চড়, ঘুষি মারতে থাকেন আমাদের। সেই সময়ে ওসি কোমরের বেল্ট খুলেও মারতে থাকেন।’

    সুশ্রীতার দাবি, ‘পাঁচ পুলিশকর্মীকে ওসি আমার পায়ের উপর দাঁড়াতে বলেন। তাঁরা দাঁড়ালে বেত দিয়ে আমার পায়ের তলায় মারতে থাকেন ওসি।’ তাঁর গায়ে গরম, গলানো মোম ফেলেও অত্যাচার করা হয় বলে অভিযোগ তুলে হাতের সেই পোড়া দাগ এ দিন দেখান সুশ্রীতা। তাঁর দাবি, মারধর ও অত্যাচারের পর তাঁদের সবাইকে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলেন ওসি, যাতে শরীরে মারধরের দাগ না–থাকে।

    নিগৃহীতা আর এক ডিএসও–কর্মী বর্ণালী নায়ক বলেন, ‘আমার মুখে বুট দিয়ে লাথি মারা হয়েছে। ঠোঁট কেটে গিয়েছে।’ বর্ণালীর কথায়, ‘আমাকে মারার সময়ে ওসি বলেন, ‘তোকে মেরে মজা পাচ্ছি না। তার পর হিন্দি গান চালিয়ে আমাকে মারতে মারতে উনি লাঠি ভেঙে ফেলেন।’ এআইডিএসও–র জেলা সম্পাদিকা তনুশ্রী বেজের বক্তব্য, ‘জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ শৌচাগারে যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে ওসি বলছিলেন, ‘এমন জায়গায় মারো, যেন চিহ্ন না–থাকে।’

    যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের দাবি, ‘এ রকম ঘটনার কোনও অবকাশই নেই। সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক সিনিয়র অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। ধৃতদের ওই রাতেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কেন এ রকম অভিযোগ করা হচ্ছে, তা জানি না।’ এসপি–র সংযোজন, ‘আমি বলব, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের জেলা নেতৃত্ব এটাকে ইস্যু করার চেষ্টা করছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)