ঘেরাটোপের ভিতরে বিভিন্ন গাছে উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি। বিশ্বের বহু বিমানবন্দরে এমন প্রজাপতি–পার্ক দেখা যায়। তাতে প্রজনন বাড়ে।
স্টাডি রিপোর্ট বলছে, বিশ্ব জুড়েই নাকি কমছে প্রজাপতির সংখ্যা। এদিকে জীববৈচিত্র বাঁচানোর স্বার্থে পরাগ মাখা প্রজাপতি ভীষণই জরুরি। কারণ, পরাগমিলন না হলে ফুল–ফলের সংখ্যা বাড়ে না। ফলে, উদ্বেগ বাড়ছে পরিবেশবিদদের। আশঙ্কা, এ ভাবে প্রজাপতির সংখ্যা কমলে, তা আখেরে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার নিরিখে বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই প্রজনন বাড়াতে চারদিকে প্রজাপতি–পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু এরকম পার্ক তৈরি হয়েছে। নিউ টাউন থেকে রাজাভাতখাওয়া — সরকারি উদ্যোগেও প্রায় ১১টি পার্ক তৈরি হয়েছে। এ বার সেই পার্ক তৈরি হচ্ছে সরকারি স্কুলেও। রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের দাবি, স্কুলের মধ্যে প্রজাপতি পার্ক তৈরি হলে একদিকে প্রজাপতির সংখ্যা বাড়বে। আবার স্কুল জীবনেই এদের গুরুত্বের কথা জানতে পারবে পড়ুয়ারা। জীববৈচিত্র পর্ষদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান সময়ে এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ, প্রজাপতির সংখ্যা ক্রমশ নিন্মগামী।
পর্ষদ সূত্রে খবর, ২০২৪–২৫ আর্থিক বছরে রাজ্যজুড়ে ৮৪টি স্কুলে প্রজাপতি পার্ক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে তালিকায় কলকাতা নেই। সবই মূলত জেলায়। কারণ, পর্ষদ কর্তারা বলছেন, এই পার্ক তৈরির জন্য স্কুলের ভিতরে যতটা জমির প্রয়োজন, তা কলকাতায় পাওয়া মুশকিল। তবে, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও যে প্রায় ৭০টি পার্ক তৈরি হবে, তাতে থাকতে পারে কলকাতার নাম।
এখন ঠিক হয়েছে, জেলায় যে সব সরকারি প্রাইমারি এবং হাইস্কুলে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, সেখানেই তৈরি হবে এই পার্ক। এর মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, বীরভূমের বোলপুর, পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ও আউশগ্রাম, নদিয়ার নাকাশিপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর-২, খড়দা ও কামারহাটি পুরসভা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর ও বিষ্ণুপুর, হাওড়ার আমতা, হুগলির খানপুর, শ্রীরামপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার স্কুল। এ ছাড়াও রউত্তরবঙ্গের নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, ময়নাগুড়ি, ফালাকাটা, মাথাভাঙা, চোপড়া, হেমতাবাদ, হরিরামপুরের স্কুলেও তৈরি হবে প্রজাপতি পার্ক।
পর্ষদের বিজ্ঞানীদের পরামর্শেই শুরু হয়েছে স্কুলে প্রজাপতি পার্ক তৈরির কাজ। পর্ষদের প্রতিনিধিরা এই পার্কগুলি নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিদর্শনে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। পার্ক তৈরির পাশাপাশি পড়ুয়াদের শেখানো হচ্ছে কী ভাবে প্রজাপতি সংরক্ষণ করতে হয়, কেন প্রজাপতি সংরক্ষণ জরুরি। জীববৈচিত্র পর্ষদের বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ছাত্রাবস্থা থেকে প্রকৃতিতে থাকা সব জীবের গুরুত্ব বোঝা প্রয়োজন। পরাগমিলনে প্রজাপতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা ছাত্রাবস্থাতেই পড়ুয়ারা জানুক। সেই কারণে, স্কুলগুলিতে প্রজাপতি পার্ক তৈরির এই পরিকল্পনা।
জীববৈচিত্র পর্ষদের চেয়ারম্যান হিমাদ্রিশেখর দেবনাথের কথায়, ‘প্রজাপতি সংরক্ষণে মূলত দু’ধরনের গাছের প্রয়োজন হয়। এক রকম গাছ থেকে প্রজাপতি খাদ্য অর্থাৎ মধু সংগ্রহ করে, যাকে বলা হয় নেক্টর প্লান্ট। অন্য গাছে প্রজাপতি ডিম পাড়ে। যা হোস্ট প্লান্ট নামে পরিচিত। এই দু’ধরনের গাছ স্কুলে লাগানো হচ্ছে।’ একদিকে খাদ্য, সেই সঙ্গে নিরাপদ বাসস্থানের টানেই প্রজাপতিরা ওই পার্কগুলিতে এসে ডিম পাড়বে। এতে বাড়বে প্রজাপতির সংখ্যা, বক্তব্য পর্ষদের কর্তাদের।
পর্ষদের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘এতদিন বাঘ, সিংহ, হাতির মতো প্রাণীদেরই সংরক্ষণের দিকে বেশি নজর দেওয়া হতো। তবে, যে সব প্রাণীরা বাস্তুতন্ত্র ধরে রেখেছে তাদের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য জীববৈচিত্র পর্ষদকে ধন্যবাদ।’ তবে উদ্যোগ নিলেই হবে না। পার্ক ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কি না, তার দিকেও নজর জরুরি, মনে করেন তড়িৎ।