• দামই নেই আলুর, ঋণ শোধ হবে কী করে, চিন্তায় চাষিরা
    এই সময় | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: সমস্যা যে হতে চলেছে, তা বোঝা গিয়েছিল মরশুমের শুরুতেই। আশঙ্কা থেকেই আলুর সহায়ক-মূল্য ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পরেও সুরাহা পাচ্ছেন না চাষিরা। মরশুমের শুরুতেই আলুর দাম কার্যত তলানিতে। চাষিরা জানাচ্ছেন, আলু বিক্রি করে চাষের খরচও উঠছে না। আগামী দিনে আলুর দাম না বাড়লে বহু আলু চাষির বড় অঙ্কের লোকসান হবে।

    সরকার আলুর ন্যুনতম সহায়ক-মূল্য কেজ–প্রতি ১০ টাকা ঘোষণা করলেও সেই সুযোগ বহু চাষিই পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ বছর আলুর ফলন হয়েছে ব্যাপক। সে কারণেই আলুর দাম নিম্নগামী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

    এই অবস্থায় অনেকেই আর খরচ বাড়িয়ে আড়ত বা পাইকারি বাজারে আলু নিয়ে যাচ্ছেন না। মাঠেই ফড়েদের আলু বেচে দিচ্ছেন। চাষিরা কেজি–প্রতি ৮ টাকা দামও পাচ্ছেন না। যেহেতু ফলন বেশি, তাই হিমঘরে রেখেও যে পরে দাম মিলবে, এমন নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরাও।

    কিছুদিন হলো জমি থেকে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু আলুর দাম না থাকায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। হুগলি,বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ — সর্বত্রই একই ছবি। এই জেলাগুলির বিস্তীর্ণ এলাকায় বিপুল পরিমাণে আলুর চাষ হয়। শীতে বৃষ্টি হয়নি, আবহাওয়া ছিল আলু চাষের পক্ষে অনুকূল। ফলে জেলায় জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।

    যে সব চাষি আগাম আলুর চাষ করেছিলেন, তাঁরা কিছুটা দাম পেয়েছেন। অল্প সময়ে আলু তুলে অন্য আনাজ চাষ করেছেন যাঁরা, তাঁরাও কিছুটা লাভের মুখ দেখেছেন। কিন্তু যে সব চাষি আগাম আলু তুলে ফের নতুন করে আলুর চাষ করছিলেন, তাঁরা এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন।

    পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার চাষি হরিপদ ঘোষ বলেন, ‘আলু বীজের আকাশছোঁয়া দাম, রাসায়নিক সারের দামও চড়া। মজুরি-সহ আলু চাষ করতে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন আলুর যা দাম তাতে প্রতি বিঘার আলু বিক্রি করে চাষিরা হাতে পাচ্ছেন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ফলে হয় লোকসান হচ্ছে, না হলে টেনেটুনে চাষের খচরটুকু উঠছে।’

    অনেকে ঋণ করে আলুর চাষ করেছিলেন। তাঁদের অবস্থা শোচনীয়। চাষিরা বলছেন, বর্তমান প্রজন্ম এমনিতেও চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে আরও উৎসাহ কমবে। সরকার সহায়ক–মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করলেও সেই সুবিধা নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ চাষিদের।

    পাইকারি আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এ বার আলুর ফলন বেশি। হিমঘরেও প্রচুর আলু সংরক্ষণ হবে। এখন ভিন রাজ্যেও আলুর চাহিদা কম। ফলে এই মুহূর্তে আলুর দাম তেমন বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)