সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়
একই ভোটার কার্ড বা এপিক নম্বরে একাধিক রাজ্যের ভোটারের নাম থাকছে কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশের নির্বাচন কমিশনকে ইতিমধ্যেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূল। তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে এ নিয়ে রাজ্যজুড়ে ভূতুড়ে ভোটার খোঁজার কাজে নেমে পড়েছেন জোড়াফুলের নেতা–কর্মীরা।
এর মধ্যে আবার বুধবার জানা গেল, দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের স্ত্রী বাসন্তী মিত্র এবং গুজরাটের গান্ধীনগরের প্রবীণাবেন পাঞ্চোলির এপিক নম্বর এক। তবে ফারাক রয়েছে দু’জনের বয়স ও ভোটকেন্দ্রের নিরিখে। মন্ত্রীর স্ত্রী দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার। বয়স ৫৯ বছর। অন্য দিকে, গুজরাটের ঘাটলোডিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার প্রবীণাবেনের বয়স ৭২ বছর।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, গঙ্গারামপুরের ১২৪ জনকে দলের তরফে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁদের এপিক নম্বর গুজরাটের ভোটারের সঙ্গে একই। মুর্শিদাবাদের রানিনগরে এই সংখ্যাটা চারশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। যেখানে হরিয়ানার ভোটারদের সঙ্গে এপিক নম্বর মিলে যাচ্ছে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বা সিইও অফিসে দীর্ঘদিন কর্মরত অফিসারদের মতে, একই এপিক নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নাম নিয়ে মাঝেমধ্যেই বিক্ষিপ্ত ভাবে অভিযোগ পাওয়া যায়। যার সত্যতা যাচাই করার পর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নজরে এনে সংশোধন করা হয়। কারণ, এপিক নম্বর কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচন কমিশন। তারাই এটা সংশোধন করতে পারে।
সিইও অফিসের আধিকারিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, নির্বাচন কমিশনের পোর্টাল বা অ্যাপে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ লিখে এপিক নম্বর দিয়ে সার্চ করা হলে এই ত্রুটি ধরা পড়বে না। তবে রাজ্যের নাম না–লিখে শুধু এপিক নম্বর লিখে খুঁজতে গেলে বিষয়টা ধরা পড়বে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটারের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৭ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ১৬৩। প্রত্যেক ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্র বা এপিক নম্বর রয়েছে। রাজ্যের সিইও অফিসের পক্ষে প্রত্যেক ভোটারের এপিক নম্বর যাচাই করা সম্ভব নয়।
তা হলে এপিক নম্বরে এত গরমিলের হদিশ মিলল কী ভাবে?
নবান্ন কর্তাদের কথায়, পুলিশের নজরেই প্রথম বিষয়টি ধরা পড়ে। বাংলাদেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে এখন কড়াকড়ি করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তা রয়েছে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এ রাজ্যে এসে ভুয়ো তথ্য দিয়ে ভোটার, আধার কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করছে।
এই মুহূর্তে হজ করার জন্য বহু সংখ্যালঘু মুসলিম পাসপোর্ট তৈরি করাচ্ছেন। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া–সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আবেদন আসছে। তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কেউ নতুন পাসপোর্টের আবেদন করলে বা পুনর্নবীকরণের সময়ে এপিক নম্বর চাওয়া হচ্ছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে এপিক ও আধার কার্ড নম্বর পুলিশ নিজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে যাচাই করে দেখছে। কোনও সমস্যা হলে সরাসরি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে যোগাযোগ করছে। এই যাচাই করার সময়েই গরমিল নজরে আসে পুলিশের। বিষয়টা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা হয়। তারপরই শুরু হয়ে যায় তোলপাড়।