প্রদীপ চক্রবর্তী, চুঁচুড়া
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফকে আলাদা করে দ্বিতীয় সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অলচিকি হরফ এ বছরেই শতবর্ষে পা দিয়েছে। এই হরফকে বিশেষ সন্মান জানানো হলো মঙ্গলবার। হুগলি জেলা পরিষদে আদিবাসীদের জনপ্রতিনিধি তথা পূর্ত দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বিজন বেসরার ঘরের দরজায় অলচিকি হরফে নেমপ্লেট বসানো হয়েছে। এই নেমপ্লেট দেখে উচ্ছ্বসিত জেলার আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা।
ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত ভাষা সাঁওতালি। এই জেলায় বহু মানুষ সাঁওতালি ভাষায় কথা বলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি সরকারি কলেজের সাঁওতালি ভাষার অধ্যাপক শ্যাম টুডু জানিয়েছেন, পরাধীন ভারতে ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলায় থাকতেন সাঁওতাল ভাষার বিশেষজ্ঞ পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু। ১৯২৫–এ তিনিই প্রথম অলচিকি হরফের সূচনা করেন। সে অর্থে এ বছরেই তার শতবর্ষ।
আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে হুগলি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন বিজন। গত পঞ্চায়েত ভোটে ধনেখালি থেকে জিতে জেলা পরিষদের সদস্য হন তিনি। তাঁর ঘরের দরজায় নেমপ্লেটে বাংলা হরফে যেমন নাম লেখা রয়েছে, তেমনই অলচিকি হরফে এ বার লেখা হলো নাম এবং পদ। উচ্ছ্বসিত বিজন বলেন, ‘এ বছরই অলচিকি হরফের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। আমি আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি। নিজের নেমপ্লেট সেই হরফে লিখে তার শুভ সূচনা করলাম। আমি চাই, যে সব জায়গায় আদিবাসী মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানে স্কুল এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও অলচিকি হরফে লেখা শুরু হোক। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জায়গায় দরবার করব।’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া বলেন, ‘অলচিকি হরফে নেমপ্লেটে নাম লেখার জন্য উনি অনুরোধ করেছিলেন। অনেক স্কুলে–কলেজে অলচিকি হরফে লেখাপড়া হয়। হুগলি জেলা পরিষদও এই ভাষাকে সম্মান জানাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অলচিকি হরফের যে সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আছে, তা এখন মানুষ আরও বেশি করে জানতে পারছেন।
সাঁওতালি ভাষার গবেষক শুভজিৎ মুর্মু বলেন, ‘পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু সাঁওতালি ভাষার লিপি আবিষ্কার করেছিলেন। ভারতে যত আদিবাসী ভাষা রয়েছে, তার মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম হলো সাঁওতালি। এ বছর যে হেতু অলচিকি হরফের শতবর্ষ, তাই ‘মিশন অলচিকি’–র মাধ্যমে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পাড়ায়–পাড়ায় প্রচার যেমন চলছে, তেমনই বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দাবি পেশ করা হচ্ছে, যাতে অলচিকি হরফে নিয়মিত লেখা হয়। আমাদের দাবি, রেল স্টেশনগুলিতেও অলচিকি হরফের ব্যবহার শুরু হোক।’