এই সময়, পানিহাটি: গত দু’দিন ধরে খবরের শিরোনামে থাকা সোদপুর অমরাবতী মাঠ অবশেষে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নিল রাজ্য সরকার। সেই মতো প্রশাসনিক স্তরে প্রস্তুতিও শুরু করে দেওয়া হয়েছে৷ ৮৫ বিঘার বিশাল ওই মাঠ বিক্রির জল্পনায় রুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নবান্ন থেকে বুধবার সেইমতো জেলা প্রশাসনের কাছে বার্তাও পাঠানো হয়েছে বলে খবর। তার ভিত্তিতে ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক বুধবারই চিঠি দিয়ে মালিক পক্ষকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
মাঠ বিক্রির চক্রান্ত রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে ময়দানে নেমেছেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক। নিজের সংসদীয় এলাকা না হলেও কোনও ভাবে যাতে মাঠটি কোনও প্রোমোটার গোষ্ঠী দখল নিতে না পারে, সে দিকে ব্যারাকপুরের সাংসদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ নজর দিতে বলেছেন বলে খবর।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে বুধবার নৈহাটিতে বসে অমরাবতী মাঠ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে পার্থ বলেন, ‘বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসতেই প্রশাসনিক স্তরে কথা বলে তিনি ওই মাঠ বিক্রির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। পানিহাটির মানুষের সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিয়ে ওই জমি সরকারি ভাবে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ওই মাঠ কোনও ভাবেই বিক্রি হতে দেওয়া যাবে না।’
সাংসদ এ দিন স্পষ্ট জানান, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকতে খেলার মাঠে অন্য কিছু হবে না। মাঠটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সামাজিক কাজের পরিবর্তে যদি বাণিজ্যিক কাজে তা ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে সরকার নোটিস দিয়ে ওই জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। সেই মতোই সরকার উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে।’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকা ওই জমি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে বুধবার মাঠের মালিক সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ইন ইন্ডিয়াকে (এসপিসিআই) নোটিস দিয়েছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁদের ওই মাঠের জমি সংক্রান্ত সমস্ত নথি নিয়ে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা স্বীকার করেছেন এসপিসিআই কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের কথায়, আবাসন প্রকল্পের পাশাপাশি মাঠে জনকল্যাণমূলক একাধিক প্রকল্প করা হবে। পুরো বিষয়টি পানিহাটির পুরপ্রধান এবং বিধায়ককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, লাভজনক স্বার্থে অমরাবতী মাঠকে ব্যবহার করা যাবে না বলে কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন সেখানে আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল? স্থানীয় পুরসভা বিষয়টি জেনেও কেন চুপ ছিল সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
এসপিসিআইয়ের সম্পাদক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করব। তবে জমিটি রাজ্য সরকার যদি অধিগ্রহণ করে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। জোকায় অনাথ মেয়েদের জন্য আমাদের একটা হোম রয়েছে। তার পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আঠারো বছর বয়সের পরে ওই মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য প্রকল্প, সোদপুরে ছেলেদের হোম তৈরির জন্য আর্থিক তহবিলের প্রয়োজন। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সেই বিষয়টি জানাব।’
এ দিন অমরাবতী মাঠ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে পানিহাটির সিপিএম নেতৃত্বও। সিপিএম নেতা দুলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘মাঠ বাঁচাতে আমরাই প্রথম আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমরা চাই ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মাঠটি ব্যবহার করা হোক। সরকারের অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’